যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম ফেডারেল সরকারের অচলাবস্থা দেশটির নাগরিকদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এর ফলস্বরূপ, হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচী নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, এবং বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারি কর্মচারীরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
এই অচলাবস্থা শিগগিরই কাটবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, যা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মতো, সরকারের অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
ডেমোক্র্যাটরা স্বাস্থ্য বীমা বিষয়ক তাদের দাবি থেকে সরতে নারাজ, অন্যদিকে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বাজেট পাস করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিমানবন্দরগুলোতে অচলাবস্থার প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়েছে। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Federal Aviation Administration) -এর নির্দেশে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইটের সংখ্যা ৪ শতাংশ কমানো হয়েছে, যার ফলে ৪০টির বেশি বিমানবন্দরের হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে।
কর্মীদের অভাবের কারণে অনেক বিমানবন্দরে বিলম্বও হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিয়ে করতে আসা এক নারী জানিয়েছেন, তার অতিথিদের ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এছাড়া, জরুরি প্রয়োজনে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে চাওয়া মানুষেরাও পড়েছেন বিপাকে।
খাদ্য সহায়তা কর্মসূচী, যা ‘সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্টেন্স প্রোগ্রাম’ (SNAP) নামে পরিচিত, সেই সুবিধাভোগীদেরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হয়েছে। আদালত খাদ্য সহায়তা প্রকল্পের পুরো সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দিলেও, পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়।
ফলে, খাদ্য সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।
কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের মানুষরা এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। খাদ্য সংগ্রহের অনিশ্চয়তা তাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক পরিবার জানিয়েছে, খাদ্য কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাদের কাছে নেই। গর্ভবতী এক নারী জানিয়েছেন, খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।
সরকারের এই অচলাবস্থা খাদ্য সরবরাহকারী দোকানগুলোর ব্যবসাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কারণ, স্বল্প আয়ের মানুষরা খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা তাদের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে পারছেন না।
বাড়ি ভাড়া, গাড়ির কিস্তি, এমনকি খাবার কেনার মতো প্রয়োজনীয় খরচ জোগাতেও তাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এই অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে তাদের চাকরি খুঁজতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, অচলাবস্থা চলতে থাকলে এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে আরও খারাপ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN