যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ: দেশটির পরিষেবা খাতে উদ্বেগের কারণ এবং বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা
সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে জানা গেছে, চলমান বাণিজ্য বিরোধের কারণে আমেরিকার শক্তিশালী পরিষেবা খাতে (service sector) ঝুঁকি বাড়ছে।
যদিও এই বিরোধগুলির মূল লক্ষ্য উৎপাদন শিল্প, তবে এর প্রভাব পরিষেবা খাতেও পড়তে পারে। এই পরিষেবা খাতটি মার্কিন অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটি বিশ্ব বাণিজ্য নেটওয়ার্কের সাথে গভীরভাবে জড়িত।
আমেরিকা বর্তমানে বাণিজ্য ঘাটতির (trade deficit) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশটির পরিষেবা খাতে, যেমন – প্রযুক্তি, শিক্ষা, পর্যটন এবং আর্থিক পরিষেবা, অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (trade surplus) রয়েছে। এই খাতটি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি পরিষেবা বিক্রি করে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে পরিষেবা খাতে আমেরিকার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ২৯৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২৫% বেশি।
মার্কিন অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে কর্মসংস্থানও অনেক বেশি। বর্তমানে দেশটির বেসরকারি খাতে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৮৪% এই পরিষেবা খাতের সঙ্গে যুক্ত। যেখানে উৎপাদন খাতে কাজ করেন ১০% এর কম শ্রমিক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্য যুদ্ধ যদি তীব্র হয়, তবে এর ফলে পরিষেবা খাতেও চাকরি হারানোর সম্ভবনা রয়েছে। কারণ, অন্য দেশগুলো পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU), কানাডা এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলো আমেরিকার পরিষেবা খাতের উপর শুল্ক আরোপ করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, চীন তাদের দেশে মার্কিন চলচ্চিত্র রপ্তানির উপর বিধিনিষেধ আরোপের কথা বিবেচনা করছে। এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নও (EU) মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উপর বিশাল জরিমানা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, যদি বিদেশি পর্যটকদের আগমন কমে যায়, তবে হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শুধু তাই নয়, শিক্ষাখাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১১ লক্ষ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন, যা দেশটির মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭%। তাদের টিউশন ফি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দা (recession) আসার সম্ভবনা বাড়ছে। এমনটা হলে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং আর্থিক পরিষেবা সহ বিভিন্ন খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ডেল্টা এয়ারলাইন্স-এর মতো সংস্থা এরই মধ্যে তাদের কর্মীদের ছাঁটাই করার পরিকল্পনা করছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের নির্বাহী পরিচালক জানিয়েছেন, শুল্কের কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে পণ্য পরিবহন ১০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের জন্য অনেক শিক্ষা নেওয়ার আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও বিশ্ব বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল। তাই, বিশ্ব অর্থনীতির যেকোনো পরিবর্তন আমাদের দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধ, শুল্ক বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মন্দা – এই বিষয়গুলো আমাদের দেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
অতএব, দেশের নীতিনির্ধারকদের উচিত বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। বাণিজ্য চুক্তি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন