যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তরে কর্মী সংকট, বাড়ছে উদ্বেগের মাত্রা।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানের ক্ষেত্রে কর্মী সংকটের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস)। দেশটির প্রায় অর্ধেক আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলোতে বর্তমানে কর্মী নিয়োগের হার ২০ শতাংশের বেশি, যা একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এমন তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন সূত্রে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলোতে কর্মী সংকট নতুন নয়। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কিছু কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ বর্তমানে এই সংকট দেখা দিয়েছে। একটি দশ বছর আগের হিসাবের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, বর্তমানে কর্মী সংকট অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি, দেশটির আরকানসাস ও কেনটাকি রাজ্যে টর্নেডো এবং প্রবল বৃষ্টি আঘাত হানে, যেখানে কর্মীদের অভাব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মী নিয়োগের হার ২০ শতাংশ বা তার বেশি হওয়াটা সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি করে। বর্তমানে দেশটির ১২২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৫টিতেই এই সংকট চলছে। এই কেন্দ্রগুলো নিয়মিতভাবে দৈনিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। এছাড়াও, জরুরি পরিস্থিতিতে তারা তাৎক্ষণিক সতর্কতা জারি করে থাকে, যেমন— টর্নেডো বা বন্যার মতো দুর্যোগের সময়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মী সংকটের কারণে অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
লুইসভিলের আবহাওয়া অফিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, কর্মী স্বল্পতার কারণে তারা সম্প্রতি টর্নেডোর ক্ষতির পরিমাণ জরিপ করতে পারেননি। সাধারণত, ভবিষ্যতের পূর্বাভাস ও সতর্কতাকে আরও উন্নত করতে এই ধরনের জরিপ তাৎক্ষণিকভাবে করা হয়। কিন্তু কর্মী কম থাকার কারণে তাদের জরুরি সতর্কতা এবং ভবিষ্যতের জন্য তথ্য সংগ্রহের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হয়।
এটা একটা সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি। আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে এই কর্মী সংকটের কারণে আমরা সম্ভবত জীবনহানির মতো ঘটনার শিকার হব।
সাবেক ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস প্রধান লুইস উসেলিনি এই সংখ্যাগুলোকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, কোনো অফিসে কখন এই ধরনের সংকট তৈরি হবে, তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। তবে, এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেশ কয়েকটি অফিসের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে যখন দেশটির একটি বিরাট অংশে খারাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, তখন এই ধরনের সংকট পরিস্থিতি আরও উদ্বেগের কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান এবং কংগ্রেসের একমাত্র আবহাওয়াবিদ এরিক সোরেনসেন বলেছেন, ‘কর্মীরা তাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, কারণ এর প্রভাব দেশের সবার ওপর পড়বে।’
২০১৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আবহাওয়া অফিসের শূন্য পদের হার ছিল ৯.৩ শতাংশ। কিন্তু ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে।
কর্মীর অভাবে কিছু কিছু কেন্দ্রে আবহাওয়ার বেলুন ওড়ানো বন্ধ হয়ে গেছে, যা সঠিক পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, অনেক অফিসে প্রধান আবহাওয়াবিদ ও সতর্কীকরণ সমন্বয়কারীর পদও শূন্য রয়েছে। হিউস্টন অফিসের মতো কিছু কেন্দ্রে শীর্ষস্থানীয় পদগুলোও ফাঁকা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ বার্নাডেট উডস প্লাকি বলেছেন, ‘ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের কর্মীরা মানুষকে নিরাপদ রাখতে এবং প্রস্তুত করতে এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, এটা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে এবং এতে জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন্দ্রের একজন প্রধান, যিনি পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি, জানিয়েছেন, রাডার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম মেরামতের জন্য টেকনিশিয়ানের অভাব মারাত্মক হতে পারে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস