মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ব্যাংকগুলোতে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়। এর ফলে জরুরি খাদ্য সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র মানুষ।
জানা গেছে, প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় ধাক্কা।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয় বা ইউএসডিএ (USDA)-এর এমন সিদ্ধান্তের ফলে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দুধ, ডিম, মাংসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে কেন্দ্রীয় ক্যালিফোর্নিয়া খাদ্য ব্যাংক (Central California Food Bank)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে তাদের কাছে আসার কথা ছিল এমন ১৩ ট্রাক খাদ্য সরবরাহের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
যার মূল্য প্রায় ৮ লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। স্থানীয় বাজারে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে এমনিতেই অনেক মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছেন। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি আরও বাড়বে।
খাদ্য বিতরণ সংস্থা ‘ফিডিং আমেরিকা’র প্রধান সরকারি সম্পর্ক বিষয়ক কর্মকর্তা ভিন্স হল জানিয়েছেন, ইউএসডিএ-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বর্তমানে এই তহবিল পর্যালোচনা করছেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে এবং খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখা যাবে। তবে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ থাকলে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এর প্রভাব আরও বেশি পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, কারণ সেখানকার খাদ্য ব্যাংকগুলো সরকারি সহায়তার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
জানা গেছে খাদ্য সরবরাহ বন্ধের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মূলত কমোডিটি ক্রেডিট কর্পোরেশন (Commodity Credit Corporation) থেকে আসা তহবিলের ওপর ভিত্তি করে।
এই তহবিল সাধারণত মার্কিন কৃষক ও খামারিদের কাছ থেকে খাদ্য কিনে জরুরি খাদ্য সরবরাহকারীদের দিয়ে থাকে। এছাড়া, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় খাদ্য ব্যাংক ও স্কুলগুলোর জন্য স্থানীয় কৃষক ও খামারিদের কাছ থেকে খাদ্য কেনার জন্য দেওয়া প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রো এলাকার ক্যাপিটাল এরিয়া ফুড ব্যাংক জানিয়েছে, সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের প্রায় ১৩ লক্ষ ডলার মূল্যের খাদ্য সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে। খাদ্য ব্যাংকটি জানিয়েছে, তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গত বছর প্রায় ৬ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে তাদের পক্ষে এই ঘাটতি পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে সব খাদ্য ব্যাংক যে ব্যক্তিগত অনুদান বা কর্পোরেট সহায়তা থেকে এই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে, তা নয়। উদাহরণস্বরূপ, সাউথওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার একটি খাদ্য বিতরণ সংস্থা জানিয়েছে, তাদের ৫ লক্ষ ১৩ হাজার ডলার মূল্যের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
এই মুহূর্তে তাদের পক্ষে বিকল্প উপায়ে খাদ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের এখন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং হয়তো অনেক কম মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে হবে।
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক এমন সংকট নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। খাদ্য সরবরাহ বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দরিদ্র ও অসহায় পরিবারগুলো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে খাদ্য সংকটে পড়া মানুষগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			