পুরোনো গাড়ি কেনা একদিকে যেমন সাশ্রয়ী হতে পারে, তেমনই কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এটি অনেক সময় লোকসানের কারণও হয়ে দাঁড়ায়। নতুন গাড়ির তুলনায় পুরোনো গাড়ির দাম সাধারণত বেশ কম থাকে, তবে কিছু বিষয় আছে যা একজন ক্রেতাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক ব্যবহৃত গাড়ি কেনার সময় পাঁচটি সাধারণ ভুল এবং সেগুলো কিভাবে এড়িয়ে চলা যায়:
১. ভালোভাবে না চালিয়ে দেখা:
গাড়ি কেনার আগে এর চালনা পরীক্ষা করা খুবই জরুরি।
অনেকেই হয়তো গাড়িটি অল্প কিছুক্ষণের জন্য চালান, কিন্তু এর ভেতরের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সেভাবে খেয়াল করেন না। ইঞ্জিন চালু করার পর কোনো শব্দ হচ্ছে কিনা, বা রাস্তায় ঝাঁকুনি লাগলে অস্বাভাবিক কিছু মনে হচ্ছে কিনা, এইসব বিষয়গুলো ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে।
এছাড়াও, গাড়ির প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন – টাচস্ক্রিন, অ্যাপল কারপ্লে (Apple CarPlay) বা অ্যান্ড্রয়েড অটো (Android Auto) সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তা দেখে নিতে হবে। গাড়িতে থাকা অন্যান্য নিরাপত্তা ফিচারগুলো, যেমন – ব্লাইন্ড-স্পট ওয়ার্নিং (blind-spot warning) এবং ট্র্যাফিক-অ্যাডাপ্টিভ ক্রুজ কন্ট্রোল (traffic-adaptive cruise control) ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা, তা পরীক্ষা করা দরকার।
২. গাড়ির ইতিহাস এবং মেরামতের প্রতিবেদন যাচাই না করা:
পুরোনো গাড়ি কেনার সময় বিক্রেতার কথার উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করা উচিত নয়।
গাড়ির বাইরের অবস্থা ভালো দেখালেও এর পেছনে দুর্ঘটনার ইতিহাস, বন্যা অথবা অন্য কোনো বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকতে পারে। গাড়ির দুর্ঘটনার ইতিহাস জানার জন্য বাংলাদেশে বিআরটিএ (BRTA)-এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও, বিশ্বস্ত কোনো গ্যারেজ থেকে গাড়ির বিস্তারিত পরীক্ষা করানো যেতে পারে। এতে গাড়ির পূর্বে কোনো বড় ধরনের মেরামত বা ত্রুটি ছিল কিনা, তা জানা যেতে পারে।
এই ধরনের পরীক্ষার জন্য সাধারণত কিছু খরচ হতে পারে, তবে এতে আপনি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবেন।
৩. শুধু মাসিক কিস্তির দিকে মনোযোগ দেওয়া:
গাড়ি কেনার সময় অনেকে শুধু মাসিক কিস্তির দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
বিক্রেতারাও অনেক সময় ক্রেতাদের মাসিক কিস্তির পরিমাণ কম দেখিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন, যার ফলে আসল দাম অনেক বেড়ে যায়। তাই মাসিক কিস্তির দিকে না তাকিয়ে গাড়ির মোট দাম, সুদের হার এবং ঋণের মেয়াদ – এই বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কম মাসিক কিস্তি হয়তো আকর্ষণীয় হতে পারে, কিন্তু এর ফলে যদি আপনাকে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হয়, তবে সেটি ভালো সিদ্ধান্ত নয়। ঋণ নেওয়ার আগে বিভিন্ন ব্যাংকের সুদের হার তুলনা করে নেওয়া উচিত।
৪. ঋণের জন্য ভালোভাবে খোঁজখবর না করা:
গাড়ি কেনার সময় অনেকেই ডিলারদের দেওয়া ঋণের ওপর নির্ভর করেন, যা সব সময় সেরা বিকল্প নাও হতে পারে।
ডিলাররা অনেক সময় নিজেদের লাভের জন্য সুদের হার বাড়িয়ে দেন, ফলে ক্রেতাকে বেশি টাকা পরিশোধ করতে হয়। তাই, ডিলারের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার আগে নিজের ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের সুদের হার জেনে নেওয়া ভালো।
অন্য কোথাও থেকে ঋণের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ডিলারের সঙ্গে দর কষাকষি করলে ভালো সুদের হার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. আবেগতাড়িত হয়ে গাড়ি কেনা:
পুরোনো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে অনেক ক্রেতা আবেগ দ্বারা প্রভাবিত হন।
হয়তো কারো একটি বিশেষ মডেলের গাড়ি পছন্দ, অথবা কোনো দুর্ঘটনার কারণে দ্রুত গাড়ি কেনার প্রয়োজন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আবেগপ্রবণ হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে পরবর্তীতে পস্তাতে হতে পারে।
তাই তাড়াহুড়ো না করে বিভিন্ন মডেল ও ব্র্যান্ডের গাড়ির বৈশিষ্ট্য, দাম এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে পরিচিত বন্ধু বা পরিবারের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
উপসংহারে বলা যায়, পুরোনো গাড়ি কেনার আগে ভালোভাবে পরিকল্পনা ও গবেষণা করা জরুরি। গাড়ির চালনা পরীক্ষা, ইতিহাস যাচাই এবং সঠিক ঋণ নির্বাচন – এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করে আপনি একটি ভালো গাড়ি কিনতে পারেন এবং অপ্রত্যাশিত খরচ থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেন।
তথ্য সূত্র: Edmunds