বিশ্বকাপের আগে মার্কিন দলের ভরাডুবি! হতাশায় সমর্থকরা

বছর ঘুরতেই ফুটবল বিশ্বকাপ, যুক্তরাষ্ট্রের দল কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে?

আগামী ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এখনো পর্যন্ত প্রত্যাশিত ছন্দে নেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুরুষ ফুটবল দল (ইউএসএমএনটি)। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর যৌথ আয়োজনে হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টটি যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলেই মনে করা হচ্ছিল।

বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার সুযোগ হিসেবেও দেখা হচ্ছিল বিষয়টিকে। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্স তেমনটা ইঙ্গিত দিচ্ছে না।

বরং আশঙ্কা বাড়ছে, আগামী এক বছর পর বিশ্বকাপ মিশন হতাশায় পরিণত হতে পারে।

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে ৪-০ গোলে হেরেছে ইউএসএমএনটি। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের এমন অসহায় আত্মসমর্পণ অনেক ফুটবলপ্রেমীর মনে হতাশা যোগ করেছে।

খেলার প্রথমার্ধেই সুইজারল্যান্ড চতুর্থ গোলটি করে এবং এর পরেই গ্যালারিতে শুরু হয় দর্শকদের তীব্র সমালোচনা।

সুইজারল্যান্ড একটি শক্তিশালী দল, তাদের বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে। তবে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব পেরোতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের এই মানের দলগুলোর বিপক্ষে ভালো খেলতে হবে।

এই পরাজয়ের ফলে, ইউরোপীয় দলগুলোর বিপক্ষে ইউএসএমএনটির জয়হীন থাকার রেকর্ড দীর্ঘ হচ্ছে। ইউরোপের কোনো দলের বিপক্ষে তারা শেষ আটটি ম্যাচে জয় পায়নি।

সব ধরনের প্রতিযোগিতায় টানা চার ম্যাচে হারের লজ্জা তাদের।

ম্যাচ শেষে, ইউএস দলের কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনো এই হারের জন্য দলের দুর্বল শুরুর একাদশ নির্বাচনকে দায়ী করেছেন।

নাথান হ্যারিয়েল ও কুইন সুলিভানের মতো অনভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের শুরু থেকে খেলানোটা তার সিদ্ধান্ত ছিল। এছাড়া, সাবেক কোচ গ্রেগ বারহল্টারের ছেলে সেবাস্টিয়ান বারহল্টারের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় এই ম্যাচে।

বিরতির পর দলে পাঁচটি পরিবর্তন আনা হলেও, সুইজারল্যান্ড কিছুটা ঢিলেঢালা খেলার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ভালো হয়েছে।

ম্যাচ শেষে পচেত্তিনো সাংবাদিকদের বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আমার ছিল এবং তা কাজে আসেনি। যখন এমনটা হয়, তখন নিজেকেই সমালোচনা করতে হয়।”

যদিও নিয়মিত খেলোয়াড়দের অনেকেই এই ম্যাচে ছিলেন না, তবুও এই হার পচেত্তিনোর উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করবে।

গত বছর তাকে নিয়োগ দেওয়ার সময় অনেক আশা করা হয়েছিল।

আর্জেন্টাইন এই কোচকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ম্যানেজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

টটেনহ্যাম হটস্পারের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে দলকে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে তার।

এরপর তিনি প্যারিস সেন্ট জার্মেই ও চেলসির মতো ক্লাবের দায়িত্ব পালন করেছেন, যদিও সেখানে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল করতে পারেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর, ইউএস সকারের স্পোর্টিং ডিরেক্টর ম্যাট ক্রকার বলেছিলেন, পচেত্তিনো “আমাদের প্রতিভাবান দলের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সঠিক পছন্দ”।

পচেত্তিনো নিজেও দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন।

সেই সময় তিনি বলেছিলেন, “এখানে সংস্কৃতি আছে, দেশের সংস্কৃতি আছে। সবকিছুতেই ভালো মানসিকতা রয়েছে।”

কিন্তু গত নয় মাসে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন।

বারহল্টারের কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর, পচেত্তিনোর অধীনে ইউএসএমএনটি ৫টি জয় ও ৫টি পরাজয় পেয়েছে, যার মধ্যে পানামার কাছে হার অন্যতম।

দলের এই পারফরম্যান্স নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনা হচ্ছে।

এপ্রিল মাসে সিএনএন স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক স্ট্রাইকার ক্লিন্ট ডেম্পসি দলের অবস্থা নিয়ে ১০ এর মধ্যে ৬ বা ৭ নম্বর দিয়েছেন।

এরপর দলের পারফরম্যান্সে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সফল কোচ ব্রুস অ্যারেনা পচেত্তিনোকে নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি এই পদের জন্য সঠিক ব্যক্তি কিনা।

তিনি বলেছিলেন, “আমার মনে হয়, যখন কোচরা আমাদের সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং খেলোয়াড়দের সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না, তখন কঠিন হয়ে যায়। আমি নিশ্চিত, আমাদের কোচ ভালো, কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্লাব ফুটবলের চেয়ে আলাদা।

এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কাজ।”

কোচের উপর চাপ বাড়লেও, খেলোয়াড়রা প্রকাশ্যে ইতিবাচক কথা বলছেন।

সুইজারল্যান্ডের কাছে হারের পর অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার ওয়াকার জিমারম্যান বলেছেন, বিশ্বকাপের আগে ভালো পারফর্ম করার জন্য এখনো সময় আছে।

এখন সবার নজর কনকাকাফ গোল্ড কাপের দিকে।

এই টুর্নামেন্টটি যুক্তরাষ্ট্র সাতবার জিতেছে।

আগামী রোববার তারা ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু করবে।

এরপর তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে সৌদি আরব ও হাইতি।

গোল্ড কাপের প্রস্তুতি খুব একটা ভালো হয়নি।

পচেত্তিনো চাইবেন, এই টুর্নামেন্টকে কাজে লাগিয়ে দলের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে।

তবে দলের অনেক শীর্ষ খেলোয়াড়কে ছাড়াই এই টুর্নামেন্টে নামতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে।

ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ, যিনি দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়, তিনি ক্লান্তির কারণে এই টুর্নামেন্টে খেলছেন না।

এছাড়া, ওয়েস্টন ম্যাকেনি ও টিম উইয়াহ ক্লাব বিশ্বকাপের কারণে জুভেন্টাসের সঙ্গে রয়েছেন।

সার্জিনো ডেস্ট এসিএল ইনজুরির কারণে দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

পচেত্তিনো তার পুরো দল নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাননি বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এখানে ধারাবাহিকতা ও ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন।”

তবে সমালোচকদের মতে, দুর্বল পারফরম্যান্সের অজুহাত হিসেবেই পচেত্তিনোর এই কথা।

এখন দেখার বিষয়, আগামী এক বছরে দল কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *