উতাহ-এর কৃষ্ণ দম্পতির অসাধারণ যাত্রা: তরঙ্গ থেকে মন্দিরের চূড়া!

উতাহ-এর এক নিভৃত অঞ্চলে, যেখানে মরমণ সম্প্রদায়ের (The Church of Jesus Christ of Latter-day Saints) আধিপত্য, সেখানে এক যুগলের হাত ধরে গড়ে উঠেছে এক ভিন্ন ধারার মন্দির।

আশির দশকে, চারু দাস এবং তাঁর স্ত্রী বৈভাবী দেবী, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ISKCON) সঙ্গে যুক্ত হয়ে, একটি পুরনো রেডিও স্টেশন কিনেছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, কৃষ্ণের বাণী প্রচার করা।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, তাঁদের এই উদ্যোগ এক অসাধারণ রূপ নেয়।

স্প্যানিশ ফর্ক-এর ১৫ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দির।

উত্তর ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরটি যেন এক টুকরো বৃন্দাবন।

চারপাশে সবুজ প্রান্তর, যেখানে ঘুরে বেড়ায় লামা ও ময়ূর।

মন্দিরের মূল আকর্ষণ হল ১০,০০০ বর্গফুটের বিশাল উপাসনালয়টি, যার কারুকার্য দর্শকদের মন জয় করে।

চারু দাসের কথায়, “আমরা এখানে এসেছিলাম, কিন্তু কৃষ্ণ আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করিয়েছিলেন, তা তখন বুঝিনি।

এই মন্দির শুধু একটি উপাসনালয় নয়, এটি একটি মিলনস্থলও বটে।

স্থানীয় মরমণ সম্প্রদায়ের সঙ্গে এখানকার মানুষের সুসম্পর্ক রয়েছে।

প্রতি বছর, স্থানীয় বিদ্যালয়গুলি থেকে প্রায় ৪,০০০ ছাত্রছাত্রী এখানে আসে, যা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেকার পারস্পরিক বোঝাপড়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এছাড়াও, এখানকার সবচেয়ে বড় উৎসব হল হিন্দু রঙের উৎসব, যা বসন্তের আগমনকে চিহ্নিত করে।

এই উৎসবে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়।

বৈভাবী দেবী, যিনি পেশায় একজন শিল্পী, এই মন্দির নির্মাণের কাজে তাঁর সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।

তিনিই ছিলেন এই বিশাল কর্মযজ্ঞের তত্ত্বাবধায়ক।

তাঁর তত্ত্বাবধানে, এরোস্পেস পেশাদারদের ডিজাইন এবং স্থানীয় কারিগরদের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে এই মন্দির।

রেডিও স্টেশনটি একসময় তাঁদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলেও, এখন তা নতুন রূপ নিয়েছে।

চারু দাস, আধুনিক গানের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

তিনি গীতার একটি শ্লোককে র‍্যাপের মাধ্যমে পরিবেশন করেন, যা শ্রোতাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।

তিনি মনে করেন, এই মাধ্যমেই তিনি মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারছেন।

তাঁর কথায়, “এটাই আমাদের পথ, আর কৃষ্ণ আমাদের এখানে এনেছেন।”

ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ হল এই মন্দির।

যেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে আসে, একে অপরের সংস্কৃতিকে সম্মান করে এবং ভালোবাসে।

এটি প্রমাণ করে, ভিন্নতার মাঝেও ঐক্য স্থাপন করা সম্ভব।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *