আলোর ভেলকি! অতিবেগুনি আলোয় ঝলমলে প্রাণীর রহস্য!

আলোর এক জাদুকরী খেলা: অতিবেগুনি আলোতে ঝলমলে প্রাণী জগৎ।

প্রকৃতি যেন এক বিচিত্র ক্যানভাস। যেখানে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানান রঙের খেলা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা – কিছু প্রাণী অতিবেগুনি (আল্ট্রাভায়োলেট বা ইউভি) আলোতে ঝলমল করে ওঠে।

বাদুড়ের লোম থেকে শুরু করে হাঙরের চামড়া, এমনকি সাপের আঁশ পর্যন্ত – এই আলোময়তার সাক্ষী। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এই আলোকচ্ছটা আসলে এক ধরনের বিশেষ ধর্ম, যাকে বলা হয় ‘ফোটোলুমিনেসেন্স’। এর মাধ্যমে প্রাণীগুলো সূর্যের আলো অথবা কৃত্রিম ইউভি আলো শোষণ করে এবং পরে দৃশ্যমান আলো হিসেবে তা নির্গত করে।

অনেকটা উজ্জ্বল তারার মতো, যা রাতের অন্ধকারে আলো ছড়ায়।

উজ্জ্বল গোলাপী রঙের কাঠবিড়ালি দেখলে যেমন অবাক হতে হয়, তেমনই নীল আলো ছড়ানো বিছে দেখলে গা-টা শিউরে ওঠে। গভীর সমুদ্রের সবুজ হাঙর কিংবা রঙিন প্রবাল—এরা সবাই যেন এক একটি জীবন্ত আলোকরশ্মি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ঘটনা বিরল নয়, বরং অনেক বেশি সাধারণ। অস্ট্রেলিয়ার জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিজ্ঞানী, ড. লিন্ডা রেইনহোল্ড, তাঁর গবেষণায় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এই আলোময়তার ব্যাপকতা খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর মতে, “বিষয়টি ব্যতিক্রম নয়, বরং এটাই স্বাভাবিক।”

কিন্তু কেন এই আলো? বিজ্ঞানীরা এর কারণ অনুসন্ধানে নেমেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, প্রজনন এবং আত্মরক্ষার জন্য এই আলোর ব্যবহার হয়।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে, এই আলো সঙ্গীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আবার কিছু ক্ষেত্রে, শিকারী প্রাণীর চোখ থেকে বাঁচতে এটি সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, সাপের ক্ষেত্রে, যারা গাছের ডালে বাস করে, তারা হয়তো এই আলোর মাধ্যমে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারে।

কারণ, গাছের পাতাও ইউভি আলো প্রতিফলিত করে।

অন্যদিকে, কিছু সাপ, যেমন—প্রেইরি র‍্যাটলস্নেক-এর মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সম্ভবত এদের মধ্যে ইউভি আলো প্রতিফলিত করার প্রবণতা কমে গেছে, কারণ এটি এদের শিকারীদের কাছে আরও বেশি দৃশ্যমান করে তুলত।

সমুদ্রেও এই আলোময়তার খেলা চলে। গভীর সমুদ্রের নীল জলরাশির কারণে, সেখানে ইউভি আলো আরও ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারে।

তাই, অনেক সামুদ্রিক প্রাণী এই আলো ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং শিকার খুঁজে নেয়।

এই বিষয়ে গবেষণা এখনো চলছে। বিজ্ঞানীরা এখনো জানার চেষ্টা করছেন, এই আলো কীভাবে কাজ করে, প্রাণীরা কীভাবে এটি ব্যবহার করে এবং এর আরও কী কী উপকারিতা রয়েছে।

হয়তো ভবিষ্যতে আমরা আরও অনেক নতুন আবিষ্কারের সাক্ষী থাকব, যা প্রকৃতির এই রহস্যময় জগতকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *