ছুটি জমা: কর্মীর জীবনে এর ভয়ঙ্কর প্রভাব!

ছুটির খাতা জমা রাখা: কেন কর্মীরা বার্ষিক ছুটি কাটানো থেকে পিছপা হন?

কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা এবং অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে অনেক কর্মী তাদের বার্ষিক ছুটি জমা রাখতে বাধ্য হন। এই প্রবণতা বর্তমানে বেশ বাড়ছে। অনেকে মনে করেন, ছুটি নিলে তাদের কর্মজীবনে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে, তাই তারা ছুটি কাটানো এড়িয়ে চলেন।

কিন্তু ছুটি না কাটানোর ফলস্বরূপ কর্মীদের মধ্যে অবসাদ, মানসিক স্বাস্থ্যহানি এবং কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাজ্যে কর্মীদের বছরে প্রায় ৩০ দিনের মতো ছুটি পাওয়ার নিয়ম রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছর যুক্তরাজ্যের মাত্র ৩৫ শতাংশ কর্মী তাদের প্রাপ্য ছুটি পুরোটাই উপভোগ করেছেন। এমনকি, মহামারীর আগের তুলনায় বর্তমানে দুই-পঞ্চমাংশ কর্মী কম ছুটি নিচ্ছেন।

এর কারণ হিসেবে কর্মীদের মধ্যে কাজ হারানোর ভয় এবং অতিরিক্ত কাজের চাপকেই প্রধানত দায়ী করা হয়।

ছুটি না কাটানোর কারণে কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা মাসের পর মাস কোনো ছুটি নেন না, তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ কর্মী অবসাদ, ক্লান্তি এবং দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের শিকার হন।

এর পাশাপাশি, এটি প্রতিষ্ঠানের জন্যও ক্ষতিকর। কারণ, পর্যাপ্ত ছুটি নিলে কর্মীদের কর্মক্ষমতা প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে এবং অসুস্থতাজনিত ছুটির সংখ্যাও ২৮ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মীদের জন্য কোনো বাধ্যতামূলক বেতনসহ ছুটির নিয়ম নেই। সেখানে ছুটি দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে নিয়োগকর্তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। ফলস্বরূপ, শুধু ২০২৩ সালেই মার্কিন কর্মীরা প্রায় ৭৬৫ মিলিয়ন দিনের ছুটি ব্যবহার করতে পারেননি।

বাংলাদেশেও অনেক কর্মী তাদের বার্ষিক ছুটি কাটাতে দ্বিধা বোধ করেন। এর প্রধান কারণগুলো হলো— কাজের চাপ, সহকর্মীদের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং পদোন্নতি বা ভালো কাজের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ভয়।

বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মীদের বছরে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছুটি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই ছুটিগুলো কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে।

তবে, অনেক সময় দেখা যায়, কর্মীরা ছুটিতে গেলেও অফিসের কাজ করেন। এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৭ শতাংশ কর্মী ছুটিতে থাকার সময়ও অফিসের কাজ করেন। এটি তাদের ছুটির আসল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।

তাই, ছুটি কাটানোর সময়টাতে কাজ থেকে দূরে থাকা উচিত, যাতে মন ও শরীরের বিশ্রাম হয়।

সুতরাং, কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে নিয়মিত ছুটি কাটানো অত্যন্ত জরুরি। ছুটিগুলো শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়, বরং এটি কর্মীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *