আলোচনা: ট্রাম্পের প্রধান সমস্যা সমাধানে ভাইস প্রেসিডেন্ট, ২০২৮ এর দৌড়ে?

শিরোনাম: ট্রাম্পের প্রধান সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে আবির্ভূত, ২০২৮ সালের দৌড়ে কি নাম লেখাবেন জেডি ভেন্স?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্স ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ট্রাম্পের প্রতি বিশ্বস্ততার কারণে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবেও তার নাম শোনা যাচ্ছে।

হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে ভেন্সের ভূমিকা বাড়ছে। সম্প্রতি, বিতর্কিত জেফরি এপস্টাইন মামলা নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠকেরও আয়োজন করেছিলেন, যদিও গণমাধ্যমের ব্যাপক সমালোচনার কারণে সেটি স্থগিত করা হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম ছয় মাসে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভেন্সের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি রিপাবলিকান পার্টির (GOP) মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন, প্রশাসনের অভ্যন্তরে ঐকমত্য তৈরি এবং ট্রাম্পের ‘মাকা’ (Make America Great Again) সমর্থকগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

ট্রাম্পের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “জেডি একজন দক্ষ অগ্নিনির্বাপকের মতো কাজ করছেন। তিনি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভেন্সের এই ব্যাপক ভূমিকা ট্রাম্পের প্রশাসনের ভবিষ্যৎ এবং তার নিজের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপর প্রভাব ফেলবে।

ভেন্স ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের নীতি এবং সিদ্ধান্তগুলোর জোরালো সমর্থক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে নিজের পুরনো মতাদর্শের সঙ্গে আপস করেও তিনি ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে তার রাজনৈতিক ভাগ্যকে জুড়ে নিয়েছেন, যা তাকে ‘মাকা’ সমর্থকগোষ্ঠীর কাছে আরও বেশি পরিচিত করে তুলেছে।

সম্প্রতি, মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ভেন্স ট্রাম্পের নতুন অভ্যন্তরীণ নীতি আইনের পক্ষে জোরালো সমর্থন জুগিয়েছেন। এছাড়া, এপস্টাইন মামলার বিষয়ে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমর্থনে তিনি তার সমর্থকদের কাছে বক্তব্য রেখেছেন।

রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে, ৪১ বছর বয়সী ভেন্স হয়তো ২০২৮ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের উত্তরসূরি হতে পারেন। ট্রাম্পও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভেন্সের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, “এখনও অনেক সময় বাকি আছে, তবে তিনি ভালো কাজ করছেন এবং সম্ভবত তিনিই এই মুহূর্তে এগিয়ে আছেন।

তবে, ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত সরাসরি ভেন্সকে সমর্থন করেননি। তিনি সম্ভাব্য অন্যান্য প্রার্থীদের নামও উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভেন্সের জনপ্রিয়তা বাড়লেও, যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে।

হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরে, ভেন্স ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনেটরদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। এছাড়া, তিনি হোয়াইট হাউস এবং রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছেন।

ওহাইও (Ohio) অঙ্গরাজ্যের সাবেক সিনেটর ভেন্স কংগ্রেসের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত এবং তিনি দুই পক্ষের মধ্যে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে পারেন। ওকলাহোমার (Oklahoma) রিপাবলিকান সিনেটর মার্কওয়েইন মুলিন সিএনএনকে বলেছেন, “তিনি সবসময় উপস্থিত থাকেন এবং এটাই তার কাজের ৮০ শতাংশ। যখন তিনি কথা বলেন, তখন সবাই বোঝে যে তিনি প্রেসিডেন্টের কথা বলছেন।

ভেন্স ‘মাকা’ সমর্থকগোষ্ঠীর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি হোয়াইট হাউজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভেন্সের উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকলেও, সবকিছু তার অনুকূলে নাও থাকতে পারে। প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মতো তিনিও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পারেন। ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে নিজের একটি স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি তৈরি করাটা তার জন্য কঠিন হতে পারে।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনদের মতে, ভেন্সের জন্য এখন একটাই পথ খোলা আছে—হোয়াইট হাউজের কঠিন সমস্যাগুলো সমাধান করা এবং সফল হওয়া।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *