মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ-দে ভি ভেন্সের ভারত সফর ঘিরে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির মধ্যে দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার (তারিখ উল্লেখ করা হয়নি) সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেন্স ও তাঁর পরিবার। বৈঠকের মূল বিষয় ছিল বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা। তবে, এই আলোচনার মধ্যেই ভারতের কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
কারণ, বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে ভারত সরকার কৃষকদের সুরক্ষা দুর্বল করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী এবং দেশটির প্রধান রপ্তানি বাজার। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য জোর আলোচনা চলছে, যার লক্ষ্য শুল্ক যুদ্ধ এড়ানো। কিন্তু এই চুক্তির ফলে ভারতীয় কৃষকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অতীতে শুল্কের মাধ্যমে ভারতীয় কৃষকদের বিদেশি পণ্যের আগ্রাসন থেকে বাঁচানো হয়েছে। এখন যদি শুল্ক কমানো হয়, তাহলে স্থানীয় কৃষকদের বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে সমস্যা হবে।
বর্তমানে, ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বিদ্যমান। তবে, চীনের বাইরে অন্যান্য দেশের জন্য এই শুল্ক আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। যেখানে ভারতের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় ৪ হাজার ৫৭ কোটি মার্কিন ডলার।
তবে, বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে ভারতের কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য কৃষকদের স্বার্থ উপেক্ষা করতে পারে। অল ইন্ডিয়া কিসান সভার (এআইকেএস) সাধারণ সম্পাদক ভিজু কৃষ্ণান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “সরকার কৃষকদের অন্ধকারে রেখে বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছে। এর ফলে ভারতীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য চুক্তির ফলে ভারতের কৃষকদের জীবনযাত্রায় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ভারতের একজন বাণিজ্য অর্থনীতিবিদ বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে নিলে সরকারের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হবে।”
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে শুল্ক আরোপকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ভারতের বিরুদ্ধে বাণিজ্য ঘাটতির অভিযোগ এনেছে।
এই পরিস্থিতিতে, ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক অনিল ত্রিগুণায়াত বলেছেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে চলমান বাণিজ্যের ক্ষতি কমাতে হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।”
বর্তমানে, ভারতের গড় শুল্কহার ১৭ শতাংশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার মাত্র ৩.৩ শতাংশ। কৃষি খাতে এই পার্থক্য আরও বেশি।
ভারতের কৃষি পণ্যের ওপর গড় শুল্কহার ৩৯ শতাংশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই হার মাত্র ৪ শতাংশ।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।