বিখ্যাত শিল্পী ভানেসা বেলের কাজগুলি এবার বৃহত্তর পরিসরে জনসাধারণের সামনে আসছে, যা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে চলেছে। শিল্পী হিসেবে ভানেসা বেলের অবদানকে এতদিন সেভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তবে এবার তাঁর ১৩৬টি চিত্রকর্ম নিয়ে একটি বিশাল প্রদর্শনী হতে চলেছে, যেখানে তাঁর শিল্পকর্মের গভীরতা ও আধুনিকতার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠবে।
ভানেসা বেল, যিনি ছিলেন খ্যাতিমান লেখিকা ভার্জিনিয়া উলফের বোন, শিল্পী হিসেবেও ছিলেন অনন্য। বিশ শতকের শুরুতে লন্ডনের গর্ডন স্কয়ারে সাহিত্যিক ও শিল্পীদের একটি দল একত্রিত হয়েছিলেন, যা ‘ব্লুমসবেরি গ্রুপ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই দলের কেন্দ্রে ছিলেন ভানেসা বেল।
তিনি ছিলেন একজন উদ্ভাবক এবং আধুনিকতাবাদী শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজের চিরাচরিত ধ্যানধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই ভানেসা ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন। তাঁর বোন ভার্জিনিয়া যখন লিখতে শুরু করেন, তখন ভানেসা ছবি আঁকাকে তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তোলেন। তাঁদের বেড়ে ওঠা ছিল রক্ষণশীল ভিক্টোরিয়ান সমাজে, যেখানে নারীদের জন্য সুযোগ ছিল সীমিত।
কিন্তু তাঁরা তাঁদের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করার জন্য নিজেদের পথ খুঁজে নিয়েছিলেন।
ব্লুমসবেরি গ্রুপের সদস্যরা শিল্প, সাহিত্য এবং দর্শনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতেন। ভানেসা বেলের নেতৃত্বে এই আলোচনাগুলো আধুনিক চিন্তাভাবনার উন্মেষ ঘটিয়েছিল। তিনি প্যারিসের প্রভাবশালী শিল্পীগোষ্ঠীর কাজ প্রথম লন্ডনে প্রদর্শিত করতে সহায়তা করেন এবং পিকাসোর মতো শিল্পীর কাজ সংগ্রহ করেন।
শুধু তাই নয়, তিনি বিমূর্ত শিল্পকলার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং এই ধারায় কাজ করা প্রথম ব্রিটিশ শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
ভানেসা বেলের জীবন ছিল কর্মময়। একদিকে যেমন তিনি শিল্পের প্রতি নিবেদিত ছিলেন, তেমনই ছিল তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। সন্তান লালন-পালন করতে গিয়েও তিনি ছবি আঁকা চালিয়ে গিয়েছেন।
তাঁর কাজগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া ছিল, যা সমকালীন ব্রিটিশ শিল্পকলার ধারাকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘টি থিংস’ (Tea Things), যা ভিক্টোরিয়ান যুগের একটি চায়ের সেট নিয়ে আঁকা, দুটি ভিন্ন জগতের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে।
ভানেসা বেলের কাজের এই বিশাল প্রদর্শনী প্রমাণ করে যে, নারীদের শিল্পচর্চাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। এই ধরনের প্রদর্শনীগুলি সেইসব শিল্পীদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে, যাঁরা আগে তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা অথবা সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণার কারণে কিছুটা উপেক্ষিত ছিলেন।
এই প্রদর্শনী শুধু ভানেসা বেলের শিল্পকর্মের উদযাপন নয়, বরং সেইসব শিল্পী ও তাঁদের কাজের প্রতি সম্মান জানানো, যাঁরা শিল্পের জগতে নিজেদের অবদান রেখেছেন।
ভানেসা বেলের এই প্রদর্শনী, নারীদের শিল্পচর্চাকে আরও বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে আরও বেশি নারী শিল্পী তাঁদের প্রতিভার স্বীকৃতি পাবেন এবং তাঁদের কাজ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian