পুরুষের গোপন সমস্যার সমাধান! কিভাবে বন্ধ্যাত্বকরণ জীবনকে নিরাপদ করে?

পুরুষদের জন্য স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি: ভ্যাসেকটমি সম্পর্কে কিছু জরুরি কথা

পুরুষদের জন্য স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে ভ্যাসেকটমি (Vasectomy) এখন বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। যারা সন্তান চান না, তাদের জন্য এটি একটি কার্যকরী উপায়।

এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো, যা প্রত্যেক পুরুষের জানা প্রয়োজন।

ভ্যাসেকটমি আসলে কী?

ভ্যাসেকটমি হলো একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি, যেখানে পুরুষের শুক্রাণু বহনকারী নালী (Vas Deferens) কেটে দেওয়া হয় বা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর ফলে বীর্যে শুক্রাণু প্রবেশ করতে পারে না এবং পুরুষের পক্ষে সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব হয় না। এটি সাধারণত একটি ছোট অপারেশন, যা চিকিৎসকের চেম্বারে বা হাসপাতালে করা যায়।

অপারেশনের সময় সাধারণত স্থানীয় অ্যানেস্থেশিয়া ব্যবহার করা হয়, অর্থাৎ, শরীরের ওই অংশে অবশ করার ওষুধ দেওয়া হয়। এতে করে তেমন কোনো ব্যথা অনুভব হয় না। অপারেশনের পরে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালানো সম্ভব।

ভ্যাসেকটমি কীভাবে করা হয়?

এই পদ্ধতিতে, অন্ডকোষের উপরে বা পাশে ছোট একটি ছিদ্র করা হয়। এর মাধ্যমে শুক্রাণু বহনকারী নালী শনাক্ত করে তা কেটে দেওয়া হয় বা ব্লক করে দেওয়া হয়।

অনেক সময় কোনো সেলাইয়ের প্রয়োজন হয় না। অপারেশনের পরে কয়েক দিন সামান্য ব্যথা থাকতে পারে এবং বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

ভ্যাসেকটমির পরে কী আশা করা যায়?

অপারেশনের পর কয়েক দিন অন্ডকোষে সামান্য ব্যথা ও ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকেরা সাধারণত এক থেকে দুই দিনের জন্য বিশ্রাম নিতে এবং ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলেন।

এই সময় support করা আন্ডারওয়্যার পরলে আরাম পাওয়া যায়। বরফ ব্যবহার করলে ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। ব্যথানাশক ওষুধ সেবনেরও প্রয়োজন হতে পারে।

তবে, ভ্যাসেকটমির পর জটিলতা খুবই কম হয়। কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ক্ষত বা সংক্রমণ হতে পারে, যা দ্রুত সেরে যায়।

ভ্যাসেকটমির ধারণা ও ভুল ধারণা

ভ্যাসেকটমি সম্পর্কে অনেকের মনে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন, অনেকেই মনে করেন, এর ফলে পুরুষের যৌন ক্ষমতা কমে যায় বা শরীরে দুর্বলতা আসে।

কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ভ্যাসেকটমির ফলে যৌন জীবনে কোনো পরিবর্তন হয় না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে, এটি দম্পতিদের মধ্যে যৌন সম্পর্ককে আরও উন্নত করতে সাহায্য করে, কারণ গর্ভধারণের চিন্তা দূর হয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভ্যাসেকটমির পরপরই পুরুষটি বন্ধ্যা হয়ে যান না। শুক্রাণু সম্পূর্ণরূপে শরীর থেকে বের হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে।

তাই, অস্ত্রোপচারের পরেও কিছুকাল অন্য কোনো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত, বীর্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পরেই সঙ্গমের সময় কোনো সুরক্ষা ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।

ভ্যাসেকটমি: সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে

ভ্যাসেকটমি একটি স্থায়ী পদ্ধতি। তাই, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন। নিজের সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।

ভবিষ্যতে সন্তান নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকলে, এই পদ্ধতি বেছে নেওয়া উচিত নাও হতে পারে। তবে, কোনো দম্পতি যদি সন্তান না চান, তবে এটি একটি নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর পদ্ধতি।

অন্যান্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

পুরুষদের জন্য কনডম ব্যবহার করা একটি সহজ উপায়। নারীদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল, ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ডিভাইস (IUD), ইমপ্ল্যান্ট, ইনজেকশন, প্যাচ ও টিউবাল লাইগেশন-এর মতো বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।

প্রত্যেক পদ্ধতির নিজস্ব সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। তাই, আপনার জন্য কোনটি উপযুক্ত, তা জানতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন।

উপসংহার

ভ্যাসেকটমি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, তাড়াহুড়ো না করে ভালোভাবে সবকিছু জেনে-বুঝে এই সিদ্ধান্ত নিন।

আপনার সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করুন এবং একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, আপনার স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা আপনার নিজের হাতে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *