দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের স্মৃতি: ৮ই মে, বিজয় দিবস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল মানব ইতিহাসের এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। কোটি কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া এই যুদ্ধ কেবল ইউরোপ বা এশিয়ার কোনো অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এর প্রভাব ছিল বিশ্বজুড়ে।
এবার সেই বিধ্বংসী যুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি হলো। ৮ই মে, মিত্রশক্তির কাছে নাৎসি জার্মানির আত্মসমর্পণের দিনটি ‘ভি-ই ডে’ বা ‘ইউরোপে বিজয় দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। এরপর জার্মানির আক্রমণে একের পর এক দেশ যখন বিপর্যস্ত, তখন মিত্রশক্তির সেনারা রুখে দাঁড়িয়েছিল।
মিত্রশক্তির সম্মিলিত প্রতিরোধে অবশেষে নাৎসি জার্মানির পতন হয়। জার্মানির আত্মসমর্পণের ফলে ইউরোপে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটলেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি।
কারণ, প্রশান্ত মহাসাগরে জাপান তখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল।
জার্মানির আত্মসমর্পণের মূল ঘটনাটি ঘটেছিল ৭ই মে, ফ্রান্সে। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের আপত্তির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেওয়া হয় ৮ই মে।
রাশিয়া এই দিনটি ৯ই মে তারিখে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে।
যুদ্ধ জয়ের পথে:
১৯৪০ সালের ২৫শে জুনের মধ্যে ফ্রান্সের পতন হয় এবং হিটলারের বাহিনী ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেয়। এরপর তারা ব্রিটেনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
তবে ১৯৪২ সাল থেকে যুদ্ধের মোড় ঘুরতে শুরু করে। সোভিয়েত লাল ফৌজ মস্কোর কাছে জার্মান বাহিনীকে পরাজিত করে। ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় হয়।
এরপর ১৯৪৪ সালে মিত্রশক্তি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যুগপৎভাবে জার্মানির বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। ৬ই জুন, মিত্রশক্তি নরম্যান্ডিতে (D-Day) অবতরণ করে এবং জার্মানির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
এর কয়েক সপ্তাহ পরেই সোভিয়েত বাহিনী বার্লিনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে সোভিয়েত বাহিনী বার্লিন অবরোধ করে। ৩০শে এপ্রিল, হিটলার বার্লিনের বাঙ্কারে আত্মহত্যা করেন। ২রা মে, বার্লিনের সেনারা আত্মসমর্পণ করে।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য:
ভি-ই ডে ছিল একদিকে আনন্দের দিন, অন্যদিকে গভীর শোকের মুহূর্ত। এই দিনে মানুষজন রাস্তায় নেমে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছিল, তবে অনেকে স্বজন হারানোর বেদনায় ছিলেন কাতর।
যুদ্ধ জয়ের এই দিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা, বিশেষ করে হলোকাস্টের বিভীষিকা নতুন করে সামনে আসে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি আজও অম্লান। এই যুদ্ধ আমাদের শিক্ষা দেয় যে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো জরুরি।
যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণ:
যুদ্ধের সময় ‘দ্য ওমেন্স রয়্যাল নেভাল সার্ভিস’-এর সদস্য ডরোথিয়া ব্যারন সেই সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, “আমরা সবাই একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছি। জার্মানিকে আমাদের দেশে পা রাখতে না দেওয়ার জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম।”
শতবর্ষী মেরভিন কার্শ-এর মতে, ভি-ই ডে আমাদের বর্তমান নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে, কোনো স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস