ভোট বয়কট: ভেনেজুয়েলার নির্বাচনে মাদুরোর জয়!

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর দল দেশটির পার্লামেন্ট ও আঞ্চলিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেছে। বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করে।

সোমবার দেশটির নির্বাচন কমিশন (সিএনই) প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করে, যেখানে দেখা যায় ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট পার্টি অব ভেনেজুয়েলা (পিএসইউভি) এবং তাদের মিত্ররা জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে ৮২.৬৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

এই জয়ের ফলে দলটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং দেশটির শীর্ষ আদালতসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। উল্লেখ্য, এই আদালতের সদস্যরা ২৮৫ সদস্যের পরিষদ দ্বারা নির্বাচিত হন।

সিএনই জানিয়েছে, ২৪টি রাজ্যের মধ্যে ২৩টিতেই গভর্নর পদও সরকারদলীয় প্রার্থীরা জিতেছেন, যা বিরোধী দলের জন্য একটি বড় ধাক্কা। বিরোধী দল এর আগে চারটি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল।

নির্বাচনে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। সিএনই প্রধান কার্লোস কুইন্তেরো জানিয়েছেন, এই সংখ্যা ২০২১ সালের নির্বাচনের সমান।

যদিও, বিরোধী দলের প্রধান নেতারা নির্বাচনে ভোট বয়কটের ডাক দেন। তাঁদের অভিযোগ, গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এবং তাঁরা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।

বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেত্রী মারিয়া করোনা মাচাদো এক বিবৃতিতে বলেছেন, দেশের কিছু অঞ্চলে প্রায় ৮৫ শতাংশ ভোটার নির্বাচন বয়কট করেছেন। তাঁর মতে, সরকার গত বছরের নির্বাচনে পরাজয়কে ধামাচাপা দিতে চাইছে।

তবে প্রেসিডেন্ট মাদুরো এই বয়কটকে তেমন গুরুত্ব দেননি। তিনি বলেন, “প্রতিপক্ষ মাঠ থেকে সরে দাঁড়ালে, আমরা এগিয়ে যাই এবং সেই স্থান দখল করি।”

সাংবাদিক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার প্রধান শহরগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। অন্যদিকে, সরকার সমর্থকরা ট্রুজিলো ও আমাজন অঞ্চলের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে বিপুল সংখ্যায় ভোট দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আর্জেন্টিনার সংবাদ প্রতিনিধি তেরেসা বো জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে বিরোধী দল ভোট বয়কটের বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল, যার কারণে মাদুরোর বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়েছিল।

তিনি আরও যোগ করেন, বেশিরভাগ বিশ্লেষক নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নির্বাচন চলাকালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়, প্রায় ৪ লাখ নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল এবং ৭০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিরোধী দলের নেতা জুয়ান পাবলো গুয়ানিওপা ছিলেন, যাঁকে একটি ‘সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’-এর প্রধান হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনের বিরুদ্ধে ‘অন্তর্ঘাতমূলক’ কার্যকলাপের পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সরকার অতীতে বহুবার বিদেশি মদদপুষ্ট অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছে। এবারও তারা জানায়, কলম্বিয়া থেকে আসা ডজনখানেক ভাড়াটে সৈন্যকে আটক করা হয়েছে।

নির্বাচনের আগে দেশটির সঙ্গে কলম্বিয়ার ব্যস্ত সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মাদুরোর এই জয় এসেছে। একসময় লাতিন আমেরিকার ঈর্ষণীয় দেশ হিসেবে পরিচিত ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি এখন বেশ দুর্বল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দেশটির তেল কোম্পানি শেভরনকে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল উত্তোলনের অনুমতি বাতিল করেছেন, যা মাদুরো সরকারের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার ভেনেজুয়েলার অভিবাসীর বিতাড়ন সুরক্ষা বাতিল করেছে এবং কয়েকশ’ জনকে এল সালভাদরের একটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কারাগারে ফেরত পাঠিয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *