মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না ভেনেজুয়েলা! চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

ভেনেজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে কোনো সামরিক সংঘাত চাইছে না দেশটি, এমনটাই জানিয়েছেন ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল। সম্প্রতি ক্যারিবিয়ানে মাদক পাচারের অভিযোগে একটি নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর হামলার ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে।

সোমবার ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর কাসা আমারিয়া থেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিল বলেন, “আমরা কোনো সংঘাত চাই না, এমনকি কোনো সংঘাতে জড়ানোরও কোনো ইচ্ছা নেই।”

যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ভালো নয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এই সম্পর্ক আরও খারাপ হয়, যিনি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি বিতর্কিত নির্বাচনের পর তিনি বিরোধী দলের নেতাকে স্বীকৃতিও দিয়েছিলেন।

মার্কিন সামরিক জাহাজগুলো যখন ক্যারিবিয়ানে মোতায়েন করা হয়েছে, তখন সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইভান গিল এই মন্তব্য করেন। এর আগে ওয়াশিংটন মাদুরোকে গ্রেপ্তারের জন্য পুরস্কারের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৫০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫৪০ কোটি টাকার সমান।

২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্র একটি স্পিডবোটের ওপর হামলা চালায়, যা তারা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে জানায়। এই ঘটনার পর কারাকাসে সন্দেহ আরও বেড়ে যায় যে ওয়াশিংটন সম্ভবত মাদুরো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে।

মাদুরো এর প্রতিক্রিয়ায় প্রায় ৪৫ লক্ষ মিলিশিয়াকে দেশের সুরক্ষার জন্য একত্রিত করেছেন, যা তিনি মার্কিন ” সাম্রাজ্যবাদ”-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে উল্লেখ করলেও, ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার দেশ যেকোনো সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা কোনো সংঘাতের সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করছি, কারণ আমরা যে কোনো ধরনের আগ্রাসন প্রতিহত করতে প্রস্তুত এবং আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

নৌকা লক্ষ্য করে হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে তদন্তের আহ্বান জানানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গিল বলেন, ভেনেজুয়েলা মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে “কখনও প্রশ্ন তোলেনি”। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিনার (ওএইচসিএইচআর) কিছু কর্মকর্তাদের কার্যক্রমের সমালোচনা করেছে দেশটি।

ওএইচসিএইচআর, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করার অভিযোগ এনেছে।

স্পিডবোটের ওপর হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গিল। তিনি বলেন, “তারা (মার্কিন কর্মকর্তারা) অনেক কিছু স্পষ্ট না করেই একটি ভিডিও দেখিয়েছে। কোথায় ঘটনাটি ঘটেছে, নৌকায় কারা ছিল, অথবা এটি আদৌ ঘটেছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আমরা কেবল একটি ভিডিও দেখেছি, এর বেশি কিছু না।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্পিডবোট ধ্বংস করার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পক্ষে কথা বলেছেন এবং সতর্ক করে বলেছেন যে, সন্দেহজনক নৌযান আটকের পরিবর্তে এই ধরনের পদক্ষেপ “আবারও নেওয়া হবে।”

ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ওয়াশিংটনের দেওয়া ঘটনার বিবরণ “একটি অবৈধ কাজকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।”

গিল সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের করা মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, “ভেনেজুয়েলার সরকার বা এর কোনো নেতার মাদক পাচারের সঙ্গে সামান্যতম সম্পর্কও নেই।” তিনি এই অভিযোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেছেন, যারা মাদুরো সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে।

গিল আরও জানান, কলম্বিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে সীমান্তে মাদক পাচার বিরোধী অভিযানে ২৫ হাজারের বেশি কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলা সম্পর্কের সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন গিল। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তিনি মাদুরোর সেই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেন, “যোগাযোগের কিছু পথ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, তা এখনো খোলা আছে।”

ইভান গিল আরও যোগ করেন, “একটি পাথরের (নৌকা) পেছনে আটটি জাহাজ পাঠানোর পর, তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) নিজেদের জিজ্ঞাসা করা উচিত যে, এটা কতটা যুক্তিযুক্ত। আমরা হাল ছাড়ব না, আমরা এখানে থাকব, শাসন করব, উন্নতি করব এবং সুখে থাকব।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *