মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ জন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। টেক্সাস এবং নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালত এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের আইনজীবীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়ার সুযোগ পান।
জানা গেছে, এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ নামক একটি গ্যাংয়ের সদস্য। যদিও অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আদালতের এই পদক্ষেপ এসেছে মূলত ‘অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ নামক একটি পুরনো আইনের অধীনে বিতাড়নের চেষ্টার বিরুদ্ধে। সাধারণত, এই আইন যুদ্ধের সময় বিদেশি নাগরিকদের বন্দী ও বিতাড়িত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভেনেজুয়েলার মধ্যে কোনো যুদ্ধাবস্থা নেই, তখন এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
টেক্সাসের একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটক তিনজন এবং নিউইয়র্কের অরেঞ্জ কাউন্টিতে বন্দী থাকা আরও দুজন ভেনেজুয়েলার নাগরিকের বিতাড়ন ঠেকাতে সেখানকার আদালতগুলো অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। টেক্সাসের একজন বিচারক একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন, এবং নিউইয়র্কের আদালতও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছেন মানবাধিকার রক্ষা কর্মী এবং আইনজীবীরা, যারা ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের পক্ষে মামলা লড়ছেন। তাদের যুক্তি হলো, এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া আইনের পরিপন্থী। তারা আদালতকে আবেদন করেছেন, ‘অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর প্রয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য।
আদালতে শুনানিতে জানা যায়, সরকার এই পাঁচজনকেই ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে, তাদের চিহ্নিত করার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, তাদের শরীরে থাকা ট্যাটু, হাতের ভঙ্গি, পোশাক ইত্যাদি দেখে একটি স্কোর তৈরি করে তাদের গ্যাং সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আদালতে শুনানির পরবর্তী তারিখে, নিউইয়র্কের আদালত সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা এই বিষয়ে একটি চূড়ান্ত আদেশ দেবে কিনা। একইসঙ্গে, টেক্সাসের আদালতও এই আইনের বৈধতা নিয়ে শুনানির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে, মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একশ জনের বেশি মানুষকে বিতাড়িত করেছে এবং তাদের এল সালভাদরের একটি কুখ্যাত কারাগারে পাঠিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, বিতাড়িত করার আগে তাদের আদালতে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।
এই বিতর্কের মধ্যেই, অভিবাসন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যতে সালভাদরের গ্যাং ‘এমএস-১৩’-এর সদস্যদের বিরুদ্ধেও এই আইন প্রয়োগের পরিকল্পনা করছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান