বন্দিদশা: টেক্সাসে ভেনেজুয়েলার বন্দীদের ‘এসওএস’ বার্তা!

টেক্সাসের একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটক কয়েকজন ভেনেজুয়েলার নাগরিক নিজেদের শরীরের মাধ্যমে ‘এসওএস’ লিখে সাহায্য চেয়েছেন। তাদের অভিযোগ, মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাদের ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত ‘ট्रेन দে আরুয়া’ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে।

আটকদের পাঠানো একটি বার্তায় জানা যায়, তারা টেক্সাসের ব্লু বোনেট ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। রয়টার্সের একটি ড্রোন ক্যামেরায় ধরা পরে, তারা মাঠের ঘাস সরিয়ে বিশাল অক্ষরে ‘এসওএস’ তৈরি করেছেন।

এই ঘটনার দশ দিন আগে, বেশ কয়েকজন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে অভিবাসন কর্মকর্তারা একটি নোটিশ ধরান। যেখানে অভিযোগ করা হয়, তারা ‘ট্রেন দে আরুয়া’ গ্যাংয়ের সদস্য এবং তাদের যুদ্ধকালীন আইনের অধীনে deport করা হবে।

আটকদের পরিবারের সদস্যরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তাদের স্বজনরা কেউই গ্যাং সদস্য নন এবং তারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া নথিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছেন। যদিও, ১৮ই এপ্রিল, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে একটি বাসে তুলে অ্যাবিলাইন আঞ্চলিক বিমানবন্দরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

কিন্তু পরে, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (ACLU) এবং পরিবারের সদস্যদের হস্তক্ষেপে বাসটিকে ডিটেনশন সেন্টারে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিকভাবে তাদের deport করার উপর স্থগিতাদেশ জারি করে।

আটকদের আশঙ্কা, সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলে, তাদের এল সালভাদরের কুখ্যাত ‘সেকোট’ কারাগারে পাঠানো হতে পারে। জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে অন্তত ১৩৭ জন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে ১৯১৮ সালের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর অধীনে এই কারাগারে পাঠিয়েছে।

ব্লু বোনেট ডিটেনশন সেন্টারটি ডালাস থেকে প্রায় ২০০ মাইল দূরে অবস্থিত। এটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং কর্পোরেশন (MTC) নামক একটি বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়, যা ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’-এর (ICE) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।

আইস (ICE) কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায়, রয়টার্স একটি ছোট বিমান এবং ড্রোন ব্যবহার করে সেখানকার ছবি সংগ্রহ করে। ছবিতে দেখা যায়, আটক কয়েকজন লাল রঙের পোশাক পরে আছেন, যা তাদের উচ্চ ঝুঁকির বন্দী হিসেবে চিহ্নিত করে।

আটককৃতদের মধ্যে একজন হলেন মিলান। তিনি জানান, গত মার্চ মাসে আটলান্টা শহরতলীতে অভিবাসন কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে জর্জিয়ার স্টুয়ার্ট ডিটেনশন সেন্টার থেকে ব্লু বোনেটে স্থানান্তর করা হয়। যদিও রয়টার্স মিলানের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড খুঁজে পায়নি।

ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (DHS) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিলান ‘ট্রেন দে আরুয়া’ গ্যাংয়ের ‘চিহ্নিত’ সদস্য। তবে, এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।

ডিএইচএস-এর ওই কর্মকর্তা আরও জানান, অপর আটককৃত এস্কেলোনাকে টেক্সাসের স্থানীয় পুলিশ গ্রেফতার করার পর, জানুয়ারী, ২০২৫ সালে আইস (ICE) আটক করে। পরে তাকে গুয়ান্তানামো বে-র মার্কিন অভিবাসন কেন্দ্র থেকে ব্লু বোনেটে আনা হয়।

ডিএইচএস কর্মকর্তা এস্কেলোনাকে ‘স্ব-স্বীকৃত’ ‘ট্রেন দে আরুয়া’ সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তবে এর কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

ব্লু বোনেটের বন্দীশালা থেকে এস্কেলোনা রয়টার্সকে জানান, ‘ট্রেন দে আরুয়া’ বা অন্য কোনো গ্যাংয়ের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি ভেনেজুয়েলার একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন।

মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতার করার সময় তার ফোন নিয়ে যায়। তিনি মনে করেন, তার ফোনে থাকা কিছু ছবি, যেখানে তিনি সাধারণ কিছু ভঙ্গি করছিলেন, সেগুলোর মাধ্যমেই তাকে গ্যাং সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, তিনি স্বেচ্ছায় ভেনেজুয়েলায় ফিরে যেতে চাইলেও, কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হয়নি।

ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকট এবং প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের কঠোর নীতির কারণে গত কয়েক বছরে কয়েক লাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেরই ট্রাম্প প্রশাসন মানবিক সুরক্ষার সুযোগ বাতিল করার চেষ্টা করছে।

আটককৃতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাদের স্বজনরা deportation-এর আশঙ্কায় সব সময় উদ্বিগ্ন থাকেন। মিলানের স্ত্রী জানান, তার স্বামী ও অন্য ভেনেজুয়েলার নাগরিকরা পালা করে ঘুমোন, যাতে অভিবাসন কর্মকর্তারা তাদের deport করতে এলে তারা পরিবারের সদস্যদের খবর দিতে পারেন।

মিলানের স্ত্রী আরও জানান, তার স্বামী খাবার নিয়েও কষ্টে আছেন। তিনি বেশি সময় ঘুমানোর চেষ্টা করেন, যাতে ক্ষুধার কষ্ট কমাতে পারেন। আটককৃত অন্যান্যদের আত্মীয়-স্বজনরাও একই কথা বলেছেন।

ব্লু বোনেট ডিটেনশন সেন্টার পরিচালনাকারী এমটিসি’র একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘ব্লু বোনেটে আটক সকল বন্দীকে একজন যোগ্য পুষ্টিবিদের অনুমোদিত খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয়, যা দৈনিক ক্যালোরির চাহিদা পূরণ করে।’

ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা ফেডারেল মান এবং মানবিক আচরণের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার বজায় রেখে, ধারণক্ষমতা ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করি।’

সম্প্রতি, একজন অভিবাসন কর্মকর্তা এস্কেলোনার কক্ষে গিয়ে আটককৃতদের প্রশ্নের জবাব দেন। রয়টার্সের হাতে আসা একটি অডিও রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, বন্দীরা দ্রুত জানতে চাচ্ছিলেন, কেন সরকার তাদের এল সালভাদরে পাঠাতে চাইছে এবং তাদের অভিবাসন আদালতের শুনানির কী হবে।

ওই কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর অধীনে সরানোর চেষ্টা করছে, যা তাদের নির্ধারিত অভিবাসন আদালতের শুনানির থেকে আলাদা একটি প্রক্রিয়া।

আটকদের মধ্যে কয়েকজন জানতে চান, কীভাবে তাদের গ্যাং সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যেখানে তাদের কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই। রেকর্ড অনুযায়ী, মিলানের ১লা মে তারিখে একটি শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে, যদি না তাকে এর আগে এল সালভাদরে পাঠানো হয়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *