ভেনিস আর্কিটেকচার দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনী: প্রযুক্তি আর প্রকৃতির মেলবন্ধন?
বিশ্বজুড়ে স্থাপত্যকলার এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী, ভেনিস আর্কিটেকচার দ্বিবার্ষিকীর নতুন আসর বসেছে ইতালির ভেনিসে। এবারের প্রদর্শনী, যা ২০২৫ সালের জন্য নির্ধারিত, এর মূল ভাবনা ‘ইন্টেলিজেন্স’ বা বুদ্ধি।
এই বুদ্ধি প্রাকৃতিক, কৃত্রিম এবং সম্মিলিত – এই তিন রূপে স্থাপত্যের জগতে কেমন প্রভাব ফেলছে, তাই নিয়েই এবারের আয়োজন। প্রদর্শনীটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কার্লো রাত্তি।
প্রদর্শনীতে নজরকাড়া সব উদ্ভাবন
প্রদর্শনীতে একদিকে যেমন দেখা যাচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া, তেমনই পরিবেশবান্ধব উপাদানের ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। উদাহরণস্বরূপ, দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছে সবুজ রঙের একটি বিশাল প্রাচীর, যা তৈরি হয়েছে জীব-সিমেন্ট দিয়ে।
এই সিমেন্ট তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে মাছ ধরার জাল এবং ভেনিসীয় লেগুন থেকে সংগ্রহ করা শৈবাল। প্রাচীরটির ঢাল তৈরি করা হয়েছে গত এক হাজার বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে মাথায় রেখে।
রোবট এবং প্রযুক্তির দুনিয়া
প্রদর্শনীতে প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে অনেক চমক। কার্লো রাত্তি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন হিউম্যানয়েড রোবটদের কথা।
প্রদর্শনী চলাকালীন এই রোবটগুলো বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করবে, যার মধ্যে অন্যতম হলো পারফেক্ট “এপেরল স্প্রিজ” তৈরি করা। “এপেরল স্প্রিজ” হলো ইতালির একটি জনপ্রিয় পানীয়।
এছাড়াও, সুইজারল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করা খাঁচায় বন্দী একটি রোবট এবং এআই (Artificial Intelligence) দ্বারা ডিজাইন করা মেঝে পরিকল্পনাও দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণ
প্রদর্শনীতে একদিকে যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) ব্যবহার দেখা যাচ্ছে, তেমনই ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের প্রতিও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। ভুটানের কারিগরদের তৈরি করা একটি জটিল নকশার বিম (beam) এবং এআই-নির্ভর রোবোটিক হাতের তৈরি করা একই নকশার একটি সরলীকৃত রূপ – এই দুইয়ের তুলনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আলোচিত কিছু প্যাভিলিয়ন
বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়নগুলোও তাদের স্বকীয়তা নিয়ে এসেছে। ডেনমার্কের প্যাভিলিয়নটি সংস্কারের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে, যেখানে ধ্বংসস্তূপের মাঝে নতুন করে সবকিছু তৈরির প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
ফিনল্যান্ড তাদের প্যাভিলিয়নে আলভার আল্টোর ডিজাইন করা ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণের ওপর একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করছে, যা স্থাপত্যের ইতিহাসে শিল্পী এবং তার সঙ্গীদের অবদানকে তুলে ধরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাভিলিয়নটি আমেরিকার বারান্দা সংস্কৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত। অন্যদিকে, এস্তোনিয়ার প্যাভিলিয়নটি গণবসতি স্থাপনে ব্যবহৃত উপাদানের সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে।
কিছুটা বিশৃঙ্খলা, কিছু হতাশা
তবে, এতসব আয়োজনের মাঝে কিছু সমালোচনার সুরও শোনা যাচ্ছে। অনেক সমালোচক মনে করছেন, প্রদর্শনীটি আকারে বিশাল হওয়ায় অনেক কিছুই দর্শকদের কাছে অগোছালো মনে হতে পারে।
এছাড়া, বিভিন্ন প্রকল্পের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
উপসংহার
ভেনিস আর্কিটেকচার দ্বিবার্ষিকীর এবারের আসর স্থাপত্য এবং প্রযুক্তির এক মিশ্র রূপ নিয়ে এসেছে। একদিকে যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবোটিক্সের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে, তেমনই পরিবেশবান্ধব উপাদানের ব্যবহার এবং ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
তবে, বিশাল আয়োজন এবং কিছু প্রকল্পের মান নিয়ে কিছুটা বিতর্ক থাকলেও, এই প্রদর্শনী স্থাপত্যকলার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
তথ্য সূত্র: The Guardian