বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বইয়ের দোকান? ভাইরাল এই খবর!

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বইয়ের দোকান? – ইতালির ভেনিসের এক অভিনব গল্প

ইতালির ভেনিস শহর, যা তার মনোমুগ্ধকর খাল এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য সুপরিচিত, সেই শহরেই রয়েছে একটি অসাধারণ বইয়ের দোকান – “আকুয়া আলতা” (উচ্চ জোয়ার)। এই দোকানের মালিক, লুইজি ফ্রিজো, এক ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ভেনিসে প্রায়ই বন্যা দেখা দেয়। তাই তিনি তার দোকানের প্রায় চার লক্ষ বই বাঁচানোর জন্য এক অভিনব পরিকল্পনা করেন।

ফ্রিজো, যিনি নিজেও ভেনিসের বাসিন্দা, এই সমস্যার সমাধানে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বইগুলো সংরক্ষণের জন্য গন্ডোলা (ঐতিহ্যবাহী ভেনিসীয় নৌকা) এবং পুরনো বাথটাবের ব্যবহার শুরু করেন।

এই অভিনব উপায়ে বই সাজানোর ধারণাটি শুধু যে কার্যকরী ছিল তা নয়, বরং এটি “আকুয়া আলতা” -কে দিয়েছে এক বিশেষ পরিচিতি। দোকানের ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে, কিভাবে বইগুলো সুন্দরভাবে সজ্জিত হয়ে আছে, যেন তারা জলের বিরুদ্ধে তাদের গল্প বলছে।

এই দোকানের নামকরণের পেছনেও রয়েছে একটি বিশেষ কারণ। “আকুয়া আলতা” শব্দের অর্থ “উচ্চ জোয়ার”। দোকানের নামকরণটি যেন ভেনিসের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিচ্ছবি। মূল দোকানের অবস্থানটি পিয়াজ্জা সান মার্কো থেকে খুব বেশি দূরে নয়, তবে এটি শহরের অপেক্ষাকৃত নিচু একটি স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এখানে প্রায়ই জল আসে।

২০১৯ সালের ভয়াবহ বন্যার পর, যখন পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৬ ফুটের বেশি উপরে উঠেছিল, তখন এই দোকানের কর্মীরা তাদের উদ্ভাবনী কৌশল কাজে লাগিয়ে বইগুলোকে রক্ষা করেছিলেন। বর্তমানে, গন্ডোলা এবং বাথটাবগুলো বইয়ের তাকের উপরে স্থাপন করা হয়েছে, যা তাদের বন্যার হাত থেকে বাঁচায়।

শুধু তাই নয়, এই ব্যবস্থাটি এখন দোকানের অন্যতম আকর্ষণ।

বইপ্রেমীদের কাছে “আকুয়া আলতা” যেন এক স্বপ্নের ঠিকানা। দোকানের ভেতরে পুরনো বইয়ের স্তূপ, দুর্লভ সংস্করণের সমাহার, এবং একটি নিজস্ব বিড়াল—সবকিছুই এই স্থানটিকে করে তুলেছে অন্যরকম।

এখানকার সিঁড়িটিও একটি বিশেষ আকর্ষণ, যা তৈরি করা হয়েছে এনসাইক্লোপেডিয়া দিয়ে। এই সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য সবসময় ভিড় লেগে থাকে।

সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, “আকুয়া আলতা” -র খ্যাতি আরো বেড়েছে। ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে এই দোকানের ছবি ও ভিডিওগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

পর্যটকদের মধ্যে এই দোকানের আকর্ষণ এতটাই বেড়েছে যে, এখন তাদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। দোকানের কর্মী, ডায়ানা জানদার মতে, ব্যস্ত দিনগুলোতে এখানে ২,০০০ থেকে ৫,০০০ পর্যটকের সমাগম হয়।

পর্যটকদের এই ভিড়, একদিকে যেমন দোকানের জন্য ভালো, তেমনই এটি ভেনিসের জন্য একটি চ্যালেঞ্জও বটে। ভেনিস কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত পর্যটকদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, কিন্তু “আকুয়া আলতা” এখনো সবার জন্য খোলা।

ডায়ানা জানান, ১০ জনের বেশি দল এলে তাদের আগে থেকে জানাতে বলা হয়, এবং ছবি তোলার জন্য দর্শকদের কিছু সময়ের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়, যাতে সবাই সুযোগ পায়।

বইয়ের দোকানগুলো যে এখন শুধু বই বিক্রির স্থান নয়, বরং পর্যটকদের কাছে এক একটি গন্তব্য, তা “আকুয়া আলতা” -র দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আর্জেন্টিনার লেখক জর্জে কারিয়নের মতে, ২০১৫ সালের পর থেকে এই ধরনের স্থানগুলি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “আকুয়া আলতা”-র মতো দোকানগুলো শুধু সুন্দর নয়, বরং তারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

বর্তমানে, “আকুয়া আলতা” -র টিকে থাকার জন্য পুরাতন বই, বিরল সংস্করণ, এবং অন্যান্য স্মারক বিক্রি করা হয়। এই দোকানটি প্রমাণ করে, ভালোবাসা আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা থাকলে প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *