ডুবে যাওয়া ভেনিস: জলের তলে যাওয়া থেকে বাঁচাতে অভিনব পরিকল্পনা!

“ভাসমান শহর” ভেনিস আজ এক গভীর সংকটের সম্মুখীন। একদিকে যেমন পর্যটকদের আনাগোনায় শহরটির খ্যাতি, তেমনই অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শহরের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মাটির নিচে ভূমিধসের কারণে ধীরে ধীরে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ইতালির এই অপরূপ শহরটি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত একশ বছরে ভেনিস প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার দেবে গেছে।

আর ১৯০০ সাল থেকে এখানকার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার।

এই পরিস্থিতিতে ভেনিসকে রক্ষার জন্য এক অভিনব পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন ইতালির একজন প্রকৌশলী।

তাঁর মতে, শহরের নিচে গভীর ভূগর্ভে জল প্রবেশ করিয়ে মাটির স্তরকে সামান্য উপরে তোলা গেলে এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

পাডুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবিদ্যা ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, পিট্রো তেতিনি মনে করেন, এই পদ্ধতিতে শহরটিকে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উপরে তোলা সম্ভব।

এতে করে শহরটি সম্ভবত আরও ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে এবং এই সময়ের মধ্যে স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করা যাবে।

বর্তমানে ভেনিসকে উচ্চ জোয়ারের কবল থেকে বাঁচাতে ‘MOSE’ নামে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানে প্রায়ই উচ্চ জোয়ার দেখা যায়। এমনকি এই বাঁধ নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৬ বিলিয়ন ইউরো।

তবে এটি সব সময়ের জন্য কার্যকরী নাও হতে পারে।

তেতিনি মনে করেন, তাঁর প্রস্তাবিত পদ্ধতি ‘MOSE’-এর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করলে ভেনিসের জন্য একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।

তেতিনি’র পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভেনিসের চারপাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে গভীর কূপ খনন করে সেখানকার ভূগর্ভস্থ জলভাণ্ডারে (aquifers) লবণাক্ত জল প্রবেশ করানো হবে।

এই জল প্রবেশ করানোর ফলে মাটির স্তর ধীরে ধীরে উপরে উঠবে এবং শহরটি কিছুটা উঁচু হবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে ভেনিসকে স্থিতিশীলভাবে উপরে তোলা সম্ভব হবে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে, তেতিনি একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প পরিচালনা করতে চান।

এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ইউরো (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রায় ৩৫০ থেকে ৪৫০ কোটি বাংলাদেশি টাকা) খরচ হতে পারে।

তেতিনি মনে করেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভেনিসকে রক্ষা করা গেলে তা হবে ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তবে এই পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে।

কারো কারো মতে, মাটির নিচে জল প্রবেশ করালে তা ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে।

আবার কেউ কেউ মনে করেন, এর ফলে ভেনিসের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের ক্ষতি হতে পারে।

এদিকে, ভেনিসের জনসংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।

গত ৭০ বছরে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ শহর ছেড়ে চলে গেছে।

এর মূল কারণ হলো পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ।

ভেনিসের এই প্রচেষ্টা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *