পর্যটকদের ভিড়ে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, সেই চাপ সামাল দিতে ভেনিস শহরে আবার চালু হচ্ছে প্রবেশ ফি। আগামী শুক্রবার থেকে এই নিয়ম কার্যকর হচ্ছে, তবে যারা শেষ মুহূর্তে একদিনের জন্য শহর ভ্রমণে আসবেন, তাদের গুনতে হবে দ্বিগুণ ফি।
ইতালির এই ঐতিহাসিক শহরটিতে গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, পর্যটকদের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করা। যদিও পর্যটকদের সংখ্যায় খুব একটা প্রভাব পড়েনি, তবে শহর কর্তৃপক্ষের হিসেবে প্রায় ২.৪ মিলিয়ন ইউরো রাজস্ব আদায় হয়েছিল, যা তাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এবার কর্তৃপক্ষের ধারণা, এই পদক্ষেপ ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানটির অতিরিক্ত পর্যটকদের চাপ কমাতে সহায়তা করবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যারা ভেনিসে ঘুরতে যাবেন, তাদের অনলাইন থেকে টিকিট কাটতে হবে। টিকিটের দাম জনপ্রতি ৫ ইউরো (বর্তমান বিনিময় হারে যা প্রায় ৬০০ টাকার মতো)। তবে ভ্রমণের তিন দিনের মধ্যে টিকিট কাটলে এই ফি বেড়ে দাঁড়াবে ১০ ইউরো (প্রায় ১২০০ টাকা)। এই ফি’টি মূলত নেওয়া হবে ১৮ এপ্রিল থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত, ছুটির দিনগুলোতে। গত বছরের তুলনায় এবার এই সময়সীমা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই নিয়ম কার্যকর থাকবে।
পর্যটকদের জন্য একটি কিউআর কোড সরবরাহ করা হবে, যা শহরের প্রবেশপথগুলোতে, যেমন ভেনিস সান্টা লুসিয়া রেলস্টেশনে, দেখাতে হবে। তবে যারা হোটেলে রাত্রিযাপন করবেন, অথবা ভেনেতো অঞ্চলের বাসিন্দা, এমনকি ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের এই ফি দিতে হবে না। তবে, হোটেলে বুকিং দিলেও ওয়েবসাইটে তাদের নাম নিবন্ধন করতে হবে।
গত বছর ভেনিসে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছিল। ঐতিহাসিক শহরটিতে প্রায় ৩.৯ মিলিয়নের বেশি পর্যটক রাত কাটিয়েছেন। এছাড়া, প্রায় ৩০ মিলিয়ন পর্যটক শুধুমাত্র দিনের বেলা ভ্রমণ করেছেন। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ‘ভেনিসিয়া টুডে’র হিসাব অনুযায়ী, এরই মধ্যে ৩৫ হাজারের বেশি একদিনের ভ্রমণকারী টিকিট বুক করেছেন।
ভেনিসের পর্যটন বিষয়ক কাউন্সিলর সিমোনে ভেনটুরিনি জানান, ইউরোপের অনেক পর্যটন শহরেই এমন সমস্যা রয়েছে এবং এর কোনো ‘জাদুকরী সমাধান’ নেই। তবে প্রবেশ ফি’র এই ব্যবস্থা পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে একটি ‘কার্যকরী ও উদ্ভাবনী উপায়’। তিনি আরও বলেন, “আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করছি। পর্যটকদের চাপ কেমন, তা বুঝতে এখন আমাদের হাতে সঠিক তথ্য থাকবে, যা আগে শুধুমাত্র অনুমানের উপর নির্ভর করতে হতো। আমাদের লক্ষ্য হলো, যারা এখানে থাকতে আসে, শহরের সংস্কৃতিকে সম্মান করে এবং এখানকার জীবনযাত্রার সঙ্গে মিশে যেতে চায়, তাদের উৎসাহিত করা।”
তবে, এই ফি’র বিরোধিতা করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে। তাদের মতে, এই ফি কোনো কাজে আসেনি। তারা মনে করেন, স্বল্পমেয়াদে ভাড়ার (শর্ট-টার্ম হলিডে লেট) উপর কড়াকড়ি আরোপ এবং বছরব্যাপী স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোই পর্যটন ব্যবস্থাপনার মূল চাবিকাঠি। বিরোধী দলের কাউন্সিলর জিওভানি আন্দ্রেয়া মার্টিনি বলেন, “এই ফি কোনো প্রভাব ফেলেনি। বরং পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা এখন পর্যটকদের চাপে জর্জরিত।”
যদিও ফি’র বিরুদ্ধে নতুন করে কোনো প্রতিবাদ হয়নি, তবে স্থানীয়রা শহরের কম পরিচিত স্থানগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ানোর চেষ্টা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। মার্টিনি বলেন, “পর্যটকদের চাপ কমানোর জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হলেও, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এর জেরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কারণ, এতে তাদের শান্ত জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। যারা এখানে বসবাস করেন, তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান