যুদ্ধফেরত সৈনিকের গোপন প্রেম: ভাইরাল হল বিয়ের অজানা কাহিনী!

যুদ্ধাহত সৈনিক, যিনি দশকের পর দশক গোপন রেখেছিলেন তাঁর ভালোবাসার কথা, অবশেষে এক সহযোদ্ধার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এই ভালোবাসার গল্প এখন সারা বিশ্বে আলোচনার বিষয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মার্শাল বেলমেইন ছিলেন একজন ভিয়েতনাম যুদ্ধফেরত সৈনিক। যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে ফিরে আসার পর তিনি দীর্ঘদিন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন এবং ভালোবাসার কথা গোপন রেখেছিলেন। সমাজের ভয়, পরিবারের সদস্যদের থেকে আসা বিরূপ প্রতিক্রিয়া—সবকিছুকে উপেক্ষা করে তিনি অবশেষে তাঁর ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে পান।

১৯৬৫ সালে, মাত্র ১৯ বছর বয়সে বেলমেইন মার্কিন নৌবাহিনীতে যোগ দেন। সেই সময়, নিজের সমকামিতার কথা প্রকাশ্যে আনা ছিল অত্যন্ত কঠিন। পরিবারের সম্মান এবং সমাজের চোখে খারাপ হওয়ার ভয়ে তিনি চুপ থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তাঁর ভাষায়, “আমার পরিবারের সদস্য এবং আমার ভাই-এর মধ্যেও এই বিষয়ে বিরূপ মনোভাব ছিল।”

১৯৬৭ সালে ভিয়েতনামের খেম সান-এ এক ভয়াবহ যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন। সৈন্যদের উপর উত্তর ভিয়েতনামের সেনাবাহিনীর মর্টার হামলা হয়। বেলমেইন সেই সময় মারাত্মকভাবে আহত হন, তাঁর পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে।

আহত অবস্থায়ও তিনি অন্য এক আহত সহকর্মীর জীবন বাঁচান। তাঁর এই সাহসিকতার জন্য তিনি ‘পার্পল হার্ট’ সম্মানে ভূষিত হন।

যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর বেলমেইন মেরিল্যান্ডে অবস্থিত ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সিতে (NSA) কাজ শুরু করেন। সেখানেও তাঁকে ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অনেক গোপনীয়তা বজায় রাখতে হত। অবশেষে ১৯৬৯ সালে তিনি সম্মানজনকভাবে সার্জেন্ট পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

এরপর ১৯৭৬ সালে তিনি তাঁর সমকামিতার কথা প্রকাশ্যে আনেন। এর আগে, ১৯৭১ সালে তিনি আলবার্ট ওয়েকফিল্ড নামের এক ব্যক্তির সাথে পরিচিত হন, যিনি ছিলেন একজন সেনা সদস্য। তাঁদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তাঁরা একসঙ্গে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন।

২০০১ সালে ওয়েকফিল্ডের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন। তাঁদের ভালোবাসার গভীরতা ছিল এতটাই যে, তাঁরা এলজিবিটিকিউ+ কমিউনিটির অধিকার আদায়ের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। বিভিন্ন সভা, সমাবেশে যোগ দিয়ে তাঁরা তাঁদের ভালোবাসাকে সমাজের কাছে তুলে ধরেছেন।

বেলমেইনের এই ভালোবাসার গল্পটি তাঁর এক নাতনির মাধ্যমে আবার সবার সামনে আসে। অড্রি পেত্তিরোসি নামের ওই তরুণী তাঁর ঠাকুরদার জীবনের গল্প টিকটকে শেয়ার করেন। তাঁর এই ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

এই গল্পটি আমাদের সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এটি ভালোবাসার শক্তি, সমাজের প্রতিকূলতা জয় করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস এবং সকলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের গুরুত্বের কথা বলে। আজও বেলমেইন তাঁর প্রয়াত স্বামীর স্মৃতি বুকে নিয়ে এলজিবিটিকিউ+ অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি মনে করেন, ঘৃণা বা বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই, ভালোবাসাই সব প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারে।

তথ্যসূত্র: পিপল ম্যাগাজিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *