যুদ্ধফেরত মার্কিন সৈনিকদের মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা সীমিত করার সিদ্ধান্তের জেরে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটির বিভিন্ন ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স (VA) হাসপাতালে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসাসেবা সীমিত করার যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং রোগীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
খবর অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘমেয়াদী থেরাপি সেশনগুলো কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা বিশেষ করে মানসিক আঘাত বা ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ (PTSD)-এর শিকার সৈনিকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে কাজ করা অনেক সদস্য যুদ্ধের ভয়াবহতা ও মানসিক আঘাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। চিকিৎসা নেওয়ার পরেও তাদের সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সময় লাগে।
কিন্তু কর্তৃপক্ষের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে তাদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, বর্তমানে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত থেরাপি সেশনের সংখ্যা সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। আগে যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী সেশনের সংখ্যা বাড়ানো যেত, এখন সেই সুযোগ নেই।
অনেক ক্ষেত্রে, চিকিৎসকদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে তারা সেশনের সংখ্যা বৃদ্ধি না করেন। এমনকি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের মতে, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো আরও বেশি সংখ্যক যুদ্ধফেরত সৈনিককে চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং রোগীদের দ্রুত সুস্থ করে তোলা।
তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ধরনের সীমাবদ্ধতা রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং তাদের জন্য নিয়মিত চিকিৎসার প্রয়োজন।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে, স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসা যথেষ্ট হয় না।
উদাহরণস্বরূপ, যাদের PTSD-এর মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী থেরাপি প্রয়োজন। স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসার কারণে অনেক রোগী মাঝপথেই চিকিৎসা থেকে দূরে চলে যাচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে, আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (American Psychological Association) জানিয়েছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। সংস্থাটি মনে করে, সৈন্যদের উপযুক্ত এবং ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা পাওয়া উচিত, যেখানে চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকবে।
যুদ্ধফেরত সৈনিক মাইকেল (ছদ্মনাম) জানান, থেরাপি সেশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাকে হতাশ করেছে। তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে, আমাকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, একজন বিশ্বস্ত থেরাপিস্টের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে তার অনেক সময় লেগেছে। এখন নতুন করে অন্য কারো সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করাটা তার জন্য কঠিন হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে আরও বেশি নমনীয়তা এবং রোগীর প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, প্রত্যেক রোগীর সমস্যা আলাদা হতে পারে এবং চিকিৎসার ধরনও ভিন্ন হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন