গেম সাংবাদিকতার দুঃসময়: ক্ষতি কার?

ভিডিও গেম সাংবাদিকতা: কর্পোরেট আগ্রাসন ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা।

গত কয়েক সপ্তাহে ভিডিও গেম সাংবাদিকতা জগতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠিত কিছু ওয়েবসাইটে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে প্রভাবশালী সাইটগুলোর মালিকানা বদল হচ্ছে দ্রুত।

এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে মুনাফা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবসার নতুন ধারা।

সম্প্রতি, জনপ্রিয় গেমিং ওয়েবসাইট জায়ান্ট বম্বের দুই পরিচিত মুখ জেফ গ্রাব এবং মাইক মিনোত্তি তাদের পদত্যাগ করেছেন। শোনা যাচ্ছে, একটি পডকাস্টে কোম্পানির নতুন নীতিমালার সমালোচনা করার কারণেই এই সিদ্ধান্ত।

এর পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় গেমিং সাইট পলিগনকে কিনে নিয়েছে ভ্যালনেট নামক একটি সংস্থা, যাদের অধীনে রয়েছে স্ক্রিনর‍্যান্ট এবং গেমর‍্যান্টের মতো সাইট। এই চুক্তির ফলে পলিগনেও কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এর আগে, যুক্তরাজ্যেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে, ইউরোগেমার, গেমসইনডাস্ট্রি.বিজ, রক পেপার শটগান এবং ভিজি২৪৭-এর মতো সাইটগুলো বিক্রি হয়ে যায়।

এই ঘটনাগুলো স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, গেম সাংবাদিকতা এখন কর্পোরেট স্বার্থের সঙ্গে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে পড়েছে। পুরনো দিনের গেমিং ম্যাগাজিনগুলোতে বিজ্ঞাপনদাতাদের চাপ ছিল, যারা প্রায়ই তাদের পণ্যের নেতিবাচক রিভিউ প্রকাশে বাধা দিত।

এখনকার ডিজিটাল যুগে, বিজ্ঞাপনদাতাদের পাশাপাশি, ওয়েবসাইটগুলোর মালিকরাও মুনাফা বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।

এর ফলে, অভিজ্ঞ ও সৃজনশীল সাংবাদিকদের পরিবর্তে কম খরচে তৈরি করা কন্টেন্টের দিকে ঝুঁকছে অনেক সংস্থা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে গেমিং সাইটগুলো ব্র্যান্ড ভ্যালুর ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, যা অভিজ্ঞ কর্মীদের জন্য উদ্বেগের কারণ। ভ্যালনেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা অধিগ্রহণ করা সাইটগুলোকে “এসইও নির্ভর” কন্টেন্ট তৈরির কারখানায় পরিণত করছে।

অর্থাৎ, সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে বেশি দর্শক পাওয়ার জন্য তৈরি করা কন্টেন্টের দিকে তাদের মনোযোগ বেশি। এই ধরনের পদক্ষেপ সাংবাদিকতার গুণগত মানকে প্রভাবিত করতে পারে।

গেমের জগৎটিও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। গেমগুলো এখন বিশাল আকারের লাইভ-সার্ভিস প্ল্যাটফর্মে পরিণত হচ্ছে, যেখানে কোটি কোটি গ্রাহক নিয়মিত অর্থ খরচ করে।

এই পরিস্থিতিতে, সৃজনশীলতা ও অভিজ্ঞতার পরিবর্তে, প্রযুক্তি এবং মুনাফার হিসাব প্রাধান্য পাচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই ব্যবহার করে গেম ওয়াকথ্রু (walkthrough) বা পর্যালোচনা লেখার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা স্বল্প সময়ে বেশি দর্শক আকর্ষণ করতে পারে।

তবে, ভালো মানের গেম সাংবাদিকতার গুরুত্ব এখনো অনেক। গেম রিভিউ, গভীর বিশ্লেষণ এবং পডকাস্টগুলোর মাধ্যমে গেমাররা গেমের জগৎ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে।

এছাড়াও, গেম সাংবাদিকরা গেম ইন্ডাস্ট্রির সমস্যাগুলো তুলে ধরেন, যা গেমারদের সচেতন করে তোলে।

অন্যদিকে, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) গেমিং এখনো পর্যন্ত মূলধারায় তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এর প্রধান কারণ হলো ভিআর ব্যবহারের কারণে অনেকের মধ্যে বমি ভাব (motion sickness) হয়।

এছাড়াও, ভিআর গেম খেলার সময় ব্যবহারকারীরা তাদের চারপাশের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা অনেকের কাছে অস্বস্তিকর মনে হয়।

বর্তমানে, ভিআর-এর চেয়ে অগমেন্টেড রিয়ালিটির (এআর) দিকে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বাড়ছে।

তবে, আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

বর্তমানে অনেক স্বাধীন গেমিং সাইট তৈরি হচ্ছে, যা গেমারদের কাছে নির্ভরযোগ্য খবর পৌঁছে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের ভিজি এবং আমেরিকার আফটারম্যাথ-এর মতো সাইটগুলো উল্লেখযোগ্য।

ভিডিও গেমের জগৎ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, গেম সাংবাদিকতাকে তার গুণগত মান বজায় রাখতে হবে, যা গেমারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *