প্রকাশ্যে! রুশ সেনাদের হাতে ৪ ইউক্রেনীয় সেনার নৃশংস হত্যা!

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে, রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবন্দীদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইউক্রেনের চারজন আত্মসমর্পণকারী সেনাকে গুলি করে হত্যা করছে রুশ সেনারা। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল।

ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের পিয়াতিখাতকি গ্রামে। দুটি ড্রোন—একটি ইউক্রেনীয় এবং অপরটি রুশ—ঘটনার সাক্ষী হিসেবে আকাশে ওড়ে দৃশ্যগুলো ধারণ করে।

ঘটনার ভিন্ন দুটি চিত্র পাওয়া যায় এই দুই ভিডিওতে। ইউক্রেনীয় ড্রোন থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, রুশ সেনাবাহিনীর পোশাক পরা সৈন্যরা অস্ত্র তাক করে আত্মসমর্পণকারী সেনাদের দিকে। এরপর তাদের পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

লন্ডনের সেন্টার ফর ইনফরমেশন রেসিলিয়েন্স-এর বিশেষজ্ঞ রোলো কলিন্স এই ভিডিও পর্যালোচনা করে বলেন, “২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে আমরা যতগুলো হত্যার দৃশ্য দেখেছি, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে সুস্পষ্ট।”

অন্যদিকে, রুশ ড্রোন থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সেনারা মাটিতে শুয়ে আছে, তবে তাদের জীবিত অবস্থায় দেখানো হয়েছে। ভিডিওর শেষে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যটি নেই। রুশপন্থী ব্লগাররা এই ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেছেন, তাদের সেনারা ‘শত্রুদের’ আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি যুদ্ধাপরাধের একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। ইউক্রেনের যুদ্ধাপরাধ বিভাগের প্রধান ইউরি বিলোসোভ জানিয়েছেন, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি রুশ কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “এটা নির্দিষ্ট কোনো কমান্ডারের কাজ নয়, বরং শীর্ষ নেতৃত্বের সমর্থন রয়েছে এর পেছনে।”

তবে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন মেনেই আচরণ করা হয় এবং যুদ্ধবন্দীদের হত্যার কোনো নির্দেশ তাদের নেই।

ইউক্রেনীয় প্রসিকিউটরদের মতে, পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫৪ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করেছে রুশ বাহিনী। জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ মিশন জানিয়েছে, তারা আগস্ট ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ৯১ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে।

একই সময়ে, তারা একজন রুশ সৈন্যকে হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।

এই পরিস্থিতিতে, যুদ্ধাপরাধের তদন্ত আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেনকে দেওয়া সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউক্রেনীয় হেলসিঙ্কি মানবাধিকার ইউনিয়ন, যারা মার্কিন সাহায্য থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।

যুদ্ধাপরাধের তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। অতীতে কম্বোডিয়ায় খেমারুজদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *