ভিয়েতনাম যুদ্ধের স্মৃতি: প্রতিবাদের গান কি হারিয়ে গেছে?

যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদের গান: অতীতের সুর, বর্তমানের নীরবতা?

ষাটের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল বিশ্বজুড়ে। সেই সময়ে গানের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ আর প্রতিবাদের ভাষা ফুটিয়ে তুলেছিলেন শিল্পী ও গীতিকাররা। বব ডিলান, জোয়ান বায়েজ, জুডি কলিন্সের মতো শিল্পীরা তাঁদের গানে তুলে এনেছিলেন যুদ্ধের বিভীষিকা আর শান্তির আকাঙ্ক্ষা। তাঁদের গানগুলো শুধু প্রতিবাদ ছিল না, বরং সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল, যা আজও মানুষের মনে গেঁথে আছে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সমাপ্তির পর, প্রতিবাদী গানের সেই স্বর্ণযুগ কি তবে অস্তমিত হয়েছে? এখনকার সময়েও তো সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে গান হয়, কিন্তু সেই গানগুলো কি অতীতের মতো ব্যাপক পরিচিতি পায়? বর্তমান সময়ে সঙ্গীতের জগৎ অনেক বেশি বিস্তৃত হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের গানের সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু আগের মতো একটি গান, যা সকলের কাছে পৌঁছে যাবে, এমনটা দেখা যায় না।

এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সঙ্গীতের বাণিজ্যিকীকরণ, মিডিয়ার বিভাজন, এবং শিল্পীদের রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণে অনীহা—এগুলো অন্যতম। আগে যেখানে একটি গান দ্রুত সবার কাছে পৌঁছে যেত, এখন সামাজিক মাধ্যম এবং বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাটফর্মের কারণে সেই সুযোগ কমে গেছে।

উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি ইরানের শিল্পী মেহদি ইয়াররাহির ‘রুজারিতো’ গানটি নারীদের হিজাব পরার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। আবার, ইন্দোনেশিয়ার একটি পোস্ট-পাঙ্ক ব্যান্ড ‘সুকাতানি’ তাদের গানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তবে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরোনো দিনের প্রতিবাদী গানগুলো নতুন করে ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু তাদের আসল প্রেক্ষাপটটি হয়তো অনেকের কাছেই অজানা।

আশির দশকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও গানগুলো মানুষকে একত্রিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ‘মা গো, মা’, ‘শোনো একটি মুজিবরের কণ্ঠ থেকে’—এমন অনেক গান মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল জুগিয়েছিল।

তবে, এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন হলো, প্রতিবাদী গান কি আবারও আগের মতো শক্তিশালী হয়ে উঠবে? নাকি সময়ের সাথে সাথে এর ধরন পাল্টে যাবে? হয়তো সময়ই বলবে, সঙ্গীতের এই পরিবর্তনের ধারায় নতুন সুরের জন্ম হয় কিনা, যা আবার মানুষকে একত্রিত করবে, সমাজের খারাপ দিকগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সাহায্য করবে।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *