ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে, নতুন গবেষণায় হুঁশিয়ারি।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্লু এবং সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। শুধু কোভিড-১৯ নয়, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এইডস (HIV), হেপাটাইটিস সি এবং এমনকি সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণ যেমন – শিংগলস-এর মতো রোগও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘জার্নাল অফ আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এ প্রকাশিত একটি মেটা-বিশ্লেষণে (meta-analysis) বহু বছরের ১৫৫টি গবেষণা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি তাৎক্ষণিকভাবে বা দীর্ঘমেয়াদেও বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্লু আক্রান্ত হওয়ার এক মাসের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ছয় গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ হয়।
গবেষকরা বলছেন, হৃদরোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো টিকাকরণ। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্যান্য অসুস্থতা থেকে বাঁচতে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি, এটি হৃদরোগ থেকে বাঁচতেও সহায়তা করতে পারে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এইচআইভি (HIV), হেপাটাইটিস সি এবং শিংগলসের মতো দীর্ঘমেয়াদী ভাইরাল সংক্রমণ করোনারি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও, সাইটোমেগালোভাইরাস, হার্পিস সিমপ্লেক্স, হেপাটাইটিস এ, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি), রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি), ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার মতো ভাইরাসের সংক্রমণও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে, এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
ভাইরাস কীভাবে হৃদযন্ত্রকে প্রভাবিত করে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাস সংক্রমণের দুটি প্রধান উপায় রয়েছে – একটি হলো, অতিরিক্ত সক্রিয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা হৃদযন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। অন্যটি হলো, ভাইরাস সরাসরি হৃদকলার (heart tissue) উপর আক্রমণ করে।
অধিকাংশ শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস, যেমন কোভিড-১৯, ফ্লু এবং আরএসভি, প্রথম উপায়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আর এন্টারোভাইরাস, যা হাত, পা ও মুখের রোগের কারণ, তা সরাসরি হৃদপেশিকে আক্রান্ত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, সাধারণত, ভাইরাল অসুস্থতা যত গুরুতর হয়, হৃদরোগের জটিলতাও তত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি, এই সংক্রমণগুলো আগে থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ভাইরাস সংক্রমণের পর হৃদরোগের ঝুঁকি কতটুকু, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তাই সবারই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে, যাদের আগে থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিরোধের উপায় হিসেবে টিকাকরণ এবং সময় মতো অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা খুবই জরুরি। শিংগলসের টিকা হৃদরোগের ঝুঁকি ২৩ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, তাদের ক্ষেত্রে টিকা হৃদরোগ সৃষ্টি করে না। কারণ, টিকাতে সাধারণত নিষ্ক্রিয় ভাইরাস বা ভাইরাসের কিছু অংশ ব্যবহার করা হয়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে তোলে, কিন্তু হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে না।
যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রমণ পরবর্তী হৃদরোগের ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত হন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
তথ্যসূত্র: সিএনএন