ফ্যাশন বিশ্বে আলোড়ন: পুলিৎজার জয়ী লেখকের চোখে ভার্জিল অ্যাবলোর গল্প!

ফ্যাশন জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি অল্প সময়েই জয় করেছেন সকলের মন – সেই ভার্জিল অ্যাবলোর জীবন ও কর্ম নিয়ে নতুন আলোকপাত করেছেন পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী লেখক রবিন গিভন। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর নতুন বই, ‘মেক ইট আওয়ার্স: ক্র্যাশিং দ্য গেটস অফ কালচার উইথ ভার্জিল অ্যাবলো’ (Make It Ours: Crashing the Gates of Culture with Virgil Abloh) – এ ফ্যাশন দুনিয়ার এই দিকপালের উত্থান, তাঁর সৃষ্টিশীলতা এবং ফ্যাশন জগতে তাঁর প্রভাব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

ভার্জিল অ্যাবলো ছিলেন একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। ঘানার অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান হিসেবে ইলিনয়ের রকফোর্ডে তাঁর বেড়ে ওঠা। স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্র থাকাকালীন, এমনকি পরবর্তীতে ফ্যাশন জগতে প্রবেশের আগে, তিনি ফাইন আর্ট, স্থাপত্য, ডিজেয়িং এবং ডিজাইনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। তাঁর এই বিচিত্র অভিজ্ঞতা ফ্যাশনের জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে।

অ্যাবলোর ফ্যাশন ভাবনা প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দেয়। তিনি রাস্তায় প্রচলিত পোশাক (streetwear) এবং বিলাসবহুল ফ্যাশনের মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরি করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড ‘অফ-হোয়াইট’ (Off-White)-এর সাদা তির্যক রেখা, কোটেশন চিহ্ন এবং লাল জিপ টাই-এর মতো বৈশিষ্ট্যগুলি ফ্যাশন দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি ‘নাইকি’ (Nike) এবং ‘আইকিয়া’ (Ikea)-র মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন, যা তাঁর সৃজনশীলতার প্রমাণ দেয়।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অ্যাবলো তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর ডিজাইন এবং ফ্যাশন ভাবনাকে সকলের কাছে পৌঁছে দেন। তাঁর এই কৌশল তাঁকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলে।

রবিন গিভন তাঁর বইয়ে অ্যাবলোর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহযোগী কানইয়ে ওয়েস্টের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করেছেন। কানইয়ের অনুপ্রেরণা অ্যাবলোর কাজে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, তা বইটিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। যদিও কানইয়ে ওয়েস্ট এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে ২০১৬ সালের একটি কথোপকথনে অ্যাবলোর নিজের মুখেই কানইয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা জানা যায়।

ভার্জিল অ্যাবলো ২০২১ সালে মাত্র ৪১ বছর বয়সে প্রয়াত হন। কিন্তু তাঁর কাজ আজও ফ্যাশন জগতে গভীর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। তাঁর অকালপ্রয়াণ যেন একটি অসমাপ্ত সুরের জন্ম দিয়েছে, যা ফ্যাশনপ্রেমীদের মনে আজও বাজে। তাঁর সৃষ্টিশীলতা, ফ্যাশনকে নতুন পথে চালিত করার সাহস এবং সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা – এই সবকিছুই তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে।

ফ্যাশন সমালোচক হিসেবে রবিন গিভন নিজেও একসময় অ্যাবলোর কাজ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তবে তাঁর নতুন বইয়ে অ্যাবলোর কাজ এবং ফ্যাশন জগতের ওপর তাঁর প্রভাবকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। গিভন মনে করেন, অ্যাবলো ফ্যাশন জগতে একজন সৃজনশীল পরিচালক হিসেবে নতুন ধারণা সৃষ্টি করেছেন এবং বিলাসিতার সংজ্ঞা পরিবর্তন করেছেন।

ভার্জিল অ্যাবলোর ফ্যাশন ভাবনা, তাঁর সৃষ্টিশীলতা এবং সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে। ফ্যাশন জগতে নিজেদের পরিচিতি তৈরি করতে আগ্রহী তরুণ-তরুণীদের জন্য অ্যাবলোর জীবন ও কর্ম একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *