ঐতিহাসিক মুহূর্ত! ভার্জিনিয়ার গভর্নর পদে নারী, কিন্তু আলোচনা নেই কেন?

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে আসন্ন গভর্নর নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি হতে চলেছে। ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার অথবা রিপাবলিকান উইনসাম আর্ল-সিয়ার্স – এদের মধ্যে যিনিই জয়ী হোন না কেন, তিনিই হবেন রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর।

আসন্ন নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে বর্তমানে দুই দলের এই দুই প্রার্থীই তাদের নিজ নিজ দলের প্রাইমারিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। তবে প্রচারের কেন্দ্রবিন্দুতে লিঙ্গপরিচয়কে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না তারা। বরং তাদের প্রধান ফোকাস হলো রাজ্যের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নারী নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও ভোটাররা মূলত প্রার্থীদের নীতি এবং যোগ্যতার দিকে বেশি মনোযোগ দেন। তাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এবং রাজ্যের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি।

এই নির্বাচনে প্রার্থীদের পাশাপাশি আলোচনায় এসেছে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিও। অতীতে নারীদের রাজনৈতিক অঙ্গনে আসা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। ১৯৯৩ সালে ভার্জিনিয়ার গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মেরি সু টেরি নামের একজন নারী প্রার্থী বলেন, নারীদের সাধারণত চরিত্রবান এবং কর্মঠ হিসেবে দেখা হয়, তবে শক্তিশালী এবং কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে সবসময় বিবেচনা করা হয় না।

অন্যদিকে, উইনসাম আর্ল-সিয়ার্স এর আগে লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। তিনি রাজ্যের প্রথম নারী লেফটেন্যান্ট গভর্নর, এছাড়াও তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী যিনি অঙ্গরাজ্যটিতে এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মনে করেন, ভোটাররা তার রাজনৈতিক বার্তা শুনতে আগ্রহী, তাই তিনি লিঙ্গপরিচয় বা চামড়ার রঙের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন তার নীতি ও কর্মসূচির ওপর।

অন্যদিকে অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। তিনি বিভিন্ন নির্বাচনী সমাবেশে গিয়ে সেখানকার মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। তিনি জানান, নির্বাচিত হলে তার মূল লক্ষ্য হবে রাজ্যের মানুষের জন্য কাজ করা এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর আমেরিকান উইমেন ইন পলিটিক্স-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটির ১২ জন নারী গভর্নর রয়েছেন। তাদের মধ্যে আটজন ডেমোক্রেট এবং চারজন রিপাবলিকান। তবে এখনো পর্যন্ত ১৮টি অঙ্গরাজ্যে কোনো নারী গভর্নর নির্বাচিত হননি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিশেল সোয়ার্স মনে করেন, নারীদের জন্য আইনসভার সদস্য হওয়া গভর্নরের পদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে সহজ। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আইনপ্রণেতাদের সহযোগিতা করার মানসিকতা থাকে, যা নারীদের প্রতি মানুষের ধারণার সঙ্গে মিলে যায়।

অতীতে দেখা গেছে, নারীদের নির্বাচনে জেতার ক্ষেত্রে তাদের লিঙ্গপরিচয় খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বাইরের কোনো সংগঠন তাদের পরিচিতি তুলে ধরে আগ্রহ তৈরি করতে এবং অনুদান সংগ্রহ করতে ব্যবহার করে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নারী প্রার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা এবং সমস্যাগুলো তুলে ধরেন, যা তাদের প্রচারণার একটি অংশ হয়ে ওঠে। যেমন, মা হিসেবে তাদের অভিজ্ঞতা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সবশেষে, সাবেক ভার্জিনিয়ার গভর্নর ডগলাস ওয়াইল্ডার মনে করেন, নেতৃত্ব নির্বাচনে লিঙ্গপরিচয়ের চেয়ে যোগ্যতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “আপনার দল, আপনার বর্ণ বা আপনার লিঙ্গ – এসব বিষয় ভোটারদের কাছে মুখ্য নয়। আপনি যদি আপনার কথাগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন, তাহলে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা সবার মতোই।”

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *