আতঙ্ক! কেন কেড়ে নেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ভিসা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ভিসা বাতিলের ঘটনা বাড়ছে: উদ্বেগে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা।

যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থীর কাছে স্টুডেন্ট ভিসা যেন সোনার হরিণ। কিন্তু সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে সেই ভিসাই এখন অনেকের জন্য নিজ দেশে ফেরার টিকিট হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে, যাদের অনেকেই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা প্রক্রিয়া বেশ জটিল। এখানে বিভিন্ন ধরনের ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে, যার মধ্যে যারা স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে যান না, তাদের জন্য রয়েছে দুই ডজনের বেশি ভিসা।

তবে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানত তিনটি ভিসা ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে, এফ-১ ভিসা ব্যবহার করা হয় হাই স্কুল বা কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য।

এছাড়াও, কারিগরি শিক্ষা প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য এম-১ ভিসা এবং ‘এক্সচেঞ্জ ভিজিটর’ হিসেবে আসা অধ্যাপক, গবেষক ও চিকিৎসকদের জন্য জে-১ ভিসা ব্যবহার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির সরকার বেশ কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করে থাকে। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থী নেওয়ার আগে ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম’ (এসইভিপি)-এর মাধ্যমে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’র অনুমোদন নিতে হয়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সরকারের বিতর্কের কারণ হলো, শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করতে রাজি না হওয়ায় এসইভিপি প্রোগ্রাম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

তবে, ভিসা বাতিলের মূল কারণ কি? জানা গেছে, সাধারণত কেউ যদি কোনো আইন লঙ্ঘন করে অথবা আবেদন করার সময় ভুল তথ্য দেয়, তাহলে তার ভিসা বাতিল হতে পারে।

এছাড়া, কোনো ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুতর পররাষ্ট্র নীতির পরিণতি’ ডেকে আনতে পারে এমন যুক্তিতেও ভিসা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

সম্প্রতি, যাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে কথা বলার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক বিতর্কের শিকার হয়েছেন।

তাদের অভিযোগ, ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলার কারণে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

এমনকি, তাদের গ্রেপ্তার ও বিতাড়িত করারও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

ভিসা বাতিলের এই সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এমনকি, গ্রিন কার্ডধারীদেরও বিতাড়িত করার ঘটনা ঘটেছে।

তাদের অভিযোগ, সরকার কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই তাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে।

এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক এবং বর্তমানে সেখানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

কারণ, ভিসা বাতিলের এই ধরনের ঘটনা তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভিসা বাতিলের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে রাজি না হলেও, তারা জানিয়েছে যে ভিসা প্রদান ও তা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে তারা সবসময় সতর্ক রয়েছে।

ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণত দেশটির আদালতে আপিল করার সুযোগ পান, তবে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে বলা হয়েছে, ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ সীমিত।

বর্তমানে, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সরকার কয়েক লক্ষ স্টুডেন্ট ভিসা অনুমোদন করে।

তবে, ২০১৬ সালে এফ-১ ভিসা অনুমোদনের সংখ্যা প্রায় ২৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

যদিও কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ভিসা অনুমোদনের সংখ্যা বেড়েছে, তবে তা এখনো ২০১৫ সালের রেকর্ড অতিক্রম করতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন কমে যাওয়ার পেছনে দেশটির সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশকেও দায়ী করা হয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *