৩ মেয়ের হত্যাকারী বাবার খোঁজে: বদলে গেল পুলিশের কৌশল, বাড়ছে চাঞ্চল্য!

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে তিন মেয়েকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত এক বাবার খোঁজে তৃতীয় সপ্তাহে এসে কৌশল পরিবর্তন করেছে দেশটির আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম ট্র্যাভিস ডিকার।

মেয়েদের হত্যার ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। চেলান কাউন্টি শেরিফ অফিসের প্রধান মাইক মরিসন বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ডিকারকে খুঁজে বের করতে প্রথমে ব্যাপক বিমান ও ড্রোন ব্যবহার করা হলেও এখন কৌশল বদলানো হয়েছে।

খবরটি জানিয়েছে সিএনএন।

শেরিফ মরিসন আরও জানান, ডিকারকে খুঁজতে প্রথমে প্রায় ২০ লক্ষ ডলার খরচ করা হয়েছে। তবে ছোট ও মাঝারি আকারের কাউন্টিগুলোর জন্য এই পদ্ধতি বেশিদিন ধরে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

তাই কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন তারা। পরিস্থিতি অনুযায়ী এখনও মাঝে মাঝে আকাশ পথে নজরদারি চালানো হবে, তবে ন্যাশনাল গার্ডের হেলিকপ্টার এখন থেকে একটানা ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ধরে উড়বে না।

পলাতক ট্র্যাভিস ডিকারকে সবশেষ গত ৩০শে মে দেখা গিয়েছিল। এরপর ২রা জুন তার তিন মেয়ে— ৫ বছর বয়সী অলিভিয়া, ৮ বছর বয়সী ইভলিন এবং ৯ বছর বয়সী পাইটনের— মরদেহ সিয়াটলের কাছে একটি নির্জন, পরিত্যক্ত ক্যাম্পিং গ্রাউন্ডে পাওয়া যায়।

এরপর শত শত বর্গমাইল জুড়ে শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান।

অভিযোগ উঠেছে, ডিকার তার তিন মেয়েকে অপহরণ ও তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে অপহরণ ও গুরুতর হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়া, পলাতক থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে ফেডারেল অভিযোগও আনা হয়েছে। ডিকারকে ধরিয়ে দিতে ২০ হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২১ লাখ টাকার সমান।

যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল সার্ভিস স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এই অভিযানে সহায়তা করছে। সংস্থাটির পূর্বাঞ্চলীয় জেলার প্রধান জেরোম ব্রাউন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা দ্রুত অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।

এই প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন স্থান থেকে প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থ সংগ্রহ করা হবে। সেই অর্থ স্থানীয় পুলিশ বিভাগ, সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থাকে সহায়তা করবে।

তাদের প্রধান কাজ হবে, দুর্গম এলাকায় অভিযুক্তকে খুঁজে বের করা।

শেরিফ মরিসন সিএনএনকে বলেন, “এই ধরনের অভিযানে যত বেশি সম্ভব জনবল ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করা দরকার। পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তথ্যের পরিমাণ কমে আসলে, আমাদের অন্য অংশীদারদের দিকে তাকাতে হবে, যাদের এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদী অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতা আছে।

এরপর কৌশল পরিবর্তন করে তাদের সহায়তা নিতে হবে।”

মঙ্গলবার রাতে চেলান কাউন্টি শেরিফ অফিস জানায়, তারা ওয়াশিংটনের ব্লিউয়েট পাস এলাকায় ডিকারের মতো দেখতে একজনের সন্ধান পেয়েছে।

বুধবার মরিসন জানান, তারা এখনও এই সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি ও গাড়ি লক করে রাখতে এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত খবর দিতে বলা হয়েছে।

অভিযানে বর্ডার পেট্রোল ও ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরাও অংশ নিয়েছেন। শেরিফ অফিসের গোয়েন্দারা এই হত্যা মামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, ডিকারের ট্রাক, একটি কুকুর এবং তার কিছু ব্যক্তিগত জিনিসও মেয়েদের মরদেহ থেকে প্রায় ৭৫ গজ দূরে পাওয়া গেছে।

পরীক্ষার পর জানা গেছে, ট্রাকে পাওয়া রক্তের মধ্যে একটি মানবদেহের, আর অন্যটি কোনো প্রাণীর। কুকুরটিকে স্থানীয় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

ঘটনার পর ওয়াশিংটনের গভর্নর বব ফার্গুসন ন্যাশনাল গার্ডের হেলিকপ্টার ব্যবহারের জন্য জরুরি তহবিল অনুমোদন করেছেন।

আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নেওয়া ডিকারের টিকে থাকার বিশেষ প্রশিক্ষণ ছিল। এছাড়া, দুর্গম অঞ্চলে তিনি প্রায় আড়াই মাস আত্মগোপনে ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ঘটনার চার দিন আগে তিনি কানাডায় চাকরি খোঁজার বিষয়ে গুগলে অনুসন্ধান করেছিলেন।

ডিকারের সাবেক স্ত্রী হুইটনি ডিকার জানিয়েছেন, তার মানসিক সমস্যা ছিল। তিনি বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিলেন।

সম্প্রতি সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার একটি চুক্তিতে ডিকার স্বাক্ষর করতে রাজি হননি, যেখানে তার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা নেওয়ার কথা ছিল।

হুইটনি আরও জানান, ঘটনার সময় ডিকার আশ্রয়হীন ছিলেন এবং বিভিন্ন মোটেল ও ক্যাম্পিং গ্রাউন্ডে থাকতেন।

হুইটনি ডিকারের আইনজীবী জানান, “হুইটনি তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছেন। এই শোক প্রকাশ করার মতো কোনো ভাষা নেই।”

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *