ওয়াটারবেরি, কানেকটিকাট: এক ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী ওয়াটারবেরি শহর। ৩২ বছর বয়সী এক যুবক, যিনি সম্ভবত কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে নিজের সৎ মায়ের দ্বারা বন্দী ছিলেন, সম্প্রতি একটি অগ্নিকাণ্ডের মাধ্যমে সেই নরককুণ্ড থেকে মুক্তি পেয়েছেন। খবরটি প্রকাশ্যে আসার পর শহরজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, সেই সাথে উঠেছে নানা প্রশ্ন। কিভাবে এত দিন ধরে এমন একটি ঘটনা সমাজের চোখে আড়ালে থেকে গেল?
ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে, ওয়াটারবেরির ২ ব্লেক স্ট্রিটে আগুন লাগার পরেই ঘটনার সূত্রপাত। পুলিশ জানায়, ওই বাড়ির বাসিন্দা, অভিযুক্ত ৫৬ বছর বয়সী কিম্বার্লি সুলিভানের বিরুদ্ধে অপহরণ, মারধর ও নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার সৎ ছেলেকে একটি ঘরে বন্দী করে রেখেছিলেন এবং পর্যাপ্ত খাবার দিতেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছেলেটিকে ছোটবেলায় বার্নার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যেত। সেখানকার প্রাক্তন শিক্ষিকা ও সহপাঠীরা জানান, ছেলেটি প্রায়ই দুর্বল থাকত এবং খাবার চাইত। স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক টম প্যানোন সহ অন্যান্য শিক্ষকগণও শিশুটির অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শিশু ও পরিবার বিষয়ক দপ্তরে (ডিপার্টমেন্ট অফ চিলড্রেন অ্যান্ড ফ্যামিলিজ) একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে এই পরিবার সম্পর্কিত কোনো নথি নেই।
ঘটনার পর থেকেই এলাকার বাসিন্দারা হতবাক। প্রতিবেশী মারভিন ম্যাককালাফ জানান, তিনি বাড়ির লোকজনকে সাধারণত এক সাথে খুব কমই দেখতেন। ঘটনার দিন তিনি সৎ মাকে “আমি শুধু এখান থেকে মুক্তি পেতে চাই,” বলতে শুনেছিলেন। ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ আসার পরেই তিনি পুরো বিষয়টি বুঝতে পারেন।
আগুনের ঘটনার রাতে, দমকল বিভাগের ডেপুটি চিফ বব স্টোকার্ট ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, ঘর থেকে বের করার সময় ছেলেটিকে দেখে প্রথমে তিনি কিশোর ভেবেছিলেন। কারণ, ছেলেটির ওজন ছিল মাত্র ৬৮ পাউন্ড। আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ওই যুবক দমকল কর্মীদের জানান, তিনি মুক্তি চেয়ে এই আগুন লাগিয়েছেন।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ছেলেটিকে একটি ছোট, ৮ ফুট বাই ৯ ফুটের একটি ঘরে বন্দী করে রাখা হতো। ঘরের দরজায় তালা লাগানো ছিল। পুলিশ কর্মকর্তা স্টিভ ব্রাউন জানান, ছেলেটি তাদের জানিয়েছে, তাকে খুব সামান্য খাবার দেওয়া হতো এবং ঘরের কাজ করতে বাধ্য করা হতো। এমনকি, হ্যালোউইনের দিন পর্যন্ত তাকে বাইরে যেতে দেওয়া হতো।
ওয়াটারবেরির মেয়র পল কে. পেরেনেস্কি জুনিয়র এই ঘটনাকে হৃদয়বিদারক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক যে, এত দিন ধরে এমন একটি ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটছিল, অথচ আমরা কিছুই জানতে পারিনি।
এদিকে, অভিযুক্ত কিম্বার্লি সুলিভানের আইনজীবী জানিয়েছেন, তার মক্কেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন।
এই ঘটনার পর, স্থানীয় কমিউনিটি যুবকটির পাশে দাঁড়িয়েছে। “সেফ হ্যাভেন অফ গ্রেটার ওয়াটারবেরি” নামক একটি সংস্থার মাধ্যমে এরই মধ্যে ১৩৪,০০০ ডলারেরও বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকার সমান। ঘটনার শিকার ওই যুবকের পুনর্বাসনে এই অর্থ সাহায্য করা হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন