ভয়ঙ্কর! আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বড়সড় খারাপ খবর!

শিরোনাম: আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কাটছাঁট: দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝুঁকির আশঙ্কা

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং তা থেকে বাঁচতে প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ, যেখানে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়মিত আঘাত হানে। তাই, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থা উন্নত রাখা জরুরি।

কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবহাওয়া বিষয়ক পূর্বাভাস তৈরীর কাজে যুক্ত সরকারি সংস্থা, ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)-এর বাজেট এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর ফলে জীবনহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার সময় কমিয়ে দেওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কয়েক দিন সময় পাওয়া যায়, যেখানে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারির সময়সীমা খুবই কম থাকে। উন্নত প্রযুক্তির কারণে আগে যেখানে মাত্র কয়েক মিনিটের পূর্বাভাস পাওয়া যেত, বর্তমানে তা বেড়ে ১৩ থেকে ১৫ মিনিটে দাঁড়িয়েছে। এই অতিরিক্ত সময়টুকু মানুষকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য এবং জরুরি বিভাগের কর্মীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আবহাওয়াবিদ ডেভিড স্টেনসরুড-এর মতে, “আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার এই সময়সীমা কমে গেলে জীবনহানির সংখ্যা বাড়তে পারে।”

আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরও নির্ভুল করতে স্যাটেলাইট, রাডার এবং সমুদ্রের ডেটা ব্যবহারের পাশাপাশি হারিকেন হান্টার নামে পরিচিত বিশেষ উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয়। এই উড়োজাহাজগুলো সরাসরি ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করে, যা আবহাওয়াবিদদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সংগ্রহে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস দুর্বল হয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হল, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে সমস্যা হওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়গুলো দ্রুত শক্তিশালী হচ্ছে। সমুদ্রের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, সমুদ্রের গভীরতা এবং উপরিভাগের তাপমাত্রা পরিমাপ করে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহে সমস্যা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের প্রাক্তন প্রশাসক রিক স্পিনরাড-এর মতে, পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মীদের সংখ্যা কমালে পূর্বাভাস তৈরিতে যেমন দেরি হবে, তেমনই এর গুণগত মানও কমবে। সরকারি এই পদক্ষেপের ফলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিষয়ক ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যা বিভিন্ন দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ অনেক দেশ এই ডেটার ওপর নির্ভরশীল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করা এবং তা জনগণের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দেওয়াটা জরুরি। স্থানীয় আবহাওয়াবিদরা গণমাধ্যম এবং জরুরি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন। এর ফলে জনগণের মধ্যে একটা আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়। এই ধরনের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে গেলে দুর্যোগ মোকাবিলায় সমস্যা হতে পারে।

সবশেষে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থায় বাজেট ও কর্মী ছাঁটাইয়ের এই সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা জীবন বাঁচাতে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। তাই, আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে শক্তিশালী করতে উন্নত প্রযুক্তি, পর্যাপ্ত জনবল এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *