ভয়াবহ খবর! আবহাওয়া পূর্বাভাসের অনুবাদ বন্ধ, জীবনহানির আশঙ্কা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর (National Weather Service – NWS) তাদের ওয়েদার অ্যালার্ট বা আবহাওয়ার সতর্কবার্তাগুলো এখন থেকে অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে ইংরেজি ভিন্ন অন্য ভাষায় কথা বলা কয়েক কোটি মানুষের জীবনহানির সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং জরুরি অবস্থার সতর্কতাগুলো সময় মতো জানতে না পারলে চরম আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে তারা বড় ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া অফিসের মুখপাত্র মাইকেল মুশার জানিয়েছেন, অনুবাদ পরিষেবা প্রদানকারীর সঙ্গে তাদের চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় এই অনুবাদগুলো বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের শেষের দিকে ‘লিল্ট’ নামের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি আবহাওয়া অফিসের হয়ে অনুবাদ করা শুরু করে। এর আগে আবহাওয়া অফিসের কর্মীরা ম্যানুয়ালি অনুবাদ করতেন, যা ছিল সময়সাপেক্ষ এবং দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর ছিল না।

এই অনুবাদগুলো মূলত স্প্যানিশ, চীনা, ভিয়েতনামী, ফরাসি এবং সামোয়ান ভাষায় করা হতো।

যুক্তরাষ্ট্রের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৬ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ বাড়িতে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেন। এদের মধ্যে ৪ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন।

আবহাওয়ার সতর্কবার্তা বুঝতে না পারাটা জীবন-মরণ সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় আরবানা-শ্যাম্পেইনের গবেষক জোসেফ ট্রুজিলো-ফ্যালকন। তিনি আবহাওয়া এবং জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করেন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারও অন্তর্ভুক্ত।

ট্রুজিলো-ফ্যালকন জানান, ২০২১ সালে কেনটাকিতে টর্নেডোর সময় অনুবাদ করা সতর্কবার্তা অনেক জীবন বাঁচিয়েছিল। একটি স্প্যানিশ-ভাষী পরিবার তাদের মোবাইলে ইংরেজি সতর্কবার্তাটি বুঝতে না পারায় প্রথমে সেটিকে গুরুত্ব দেয়নি।

কিন্তু যখন তারা স্প্যানিশ ভাষায় একই সতর্কবার্তা পেল, তখন দ্রুত আশ্রয় নেয়। “এটা তাদের জীবন বাঁচিয়েছিল,” বলেন ট্রুজিলো-ফ্যালকন।

আবহাওয়াবিদরা আগে একাধিক ভাষায় পারদর্শী ছিলেন এবং তারাই সতর্কবার্তা অনুবাদ করতেন। তবে তাদের মূল কাজ পূর্বাভাস দেওয়া হওয়ায়, অতিরিক্ত এই অনুবাদ করার কাজটি তাদের জন্য বেশ কঠিন ছিল।

কলম্বিয়া ক্লাইমেট স্কুলের সিনিয়র গবেষক অ্যান্ড্রু ক্রুজকিয়েভিচ বলেছেন, শুধু চরম আবহাওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, পর্যটন, পরিবহন এবং শক্তি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য সাধারণ আবহাওয়ার পূর্বাভাসও অপরিহার্য।

সঠিক সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা থাকলে পরিবার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নরমা মেন্ডোজা-ডেন্টন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে সীমিত ইংরেজি ব্যবহার করেন।

উদাহরণস্বরূপ, একজন দোকানদার হয়তো গ্রাহকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথোপকথন করতে পারেন, কিন্তু আবহাওয়া বা জলবায়ু সম্পর্কিত পরিভাষাগুলো বুঝতে তার সমস্যা হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, “যদি তারা জাতীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অন্য ভাষায় না পান, তবে তা কারো জীবন-মরণের কারণ হতে পারে।”

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *