বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (World Economic Forum – WEF)-এর প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগের জেরে তিনি নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অর্থনৈতিক ও নৈতিক গুরুতর কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, শোয়াব ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ফোরামের অর্থ ব্যবহার করেছেন। জানা গেছে, তিনি কর্মীদের ব্যক্তিগত ম্যাসাজের জন্য অর্থ দিতে বাধ্য করেছেন এবং কর্মীদের তাঁর হয়ে এটিএম থেকে হাজার হাজার ডলার তুলতে বলেছেন।
এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট’-এর তথ্য পরিবর্তন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই রিপোর্ট তৈরি হয় শিক্ষা, অবকাঠামো, শ্রমবাজার ও স্বাস্থ্যখাতের মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে, যা বার্ষিক দাভোস সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অংশ।
অভিযোগের তালিকায় আরও রয়েছেন শোয়াবের স্ত্রী হিল্ডে শোয়াব। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ফোরামের অর্থ খরচ করে বিলাসবহুল ভ্রমণে যেতেন এবং ‘ভিলা মুন্ডি’ নামক একটি বিশাল বাড়িতে পরিবারের জন্য ব্যক্তিগত সুবিধা রাখতেন।
অভিযোগগুলো সামনে আসার পরেই বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের পরিচালনা পর্ষদ জরুরি বৈঠকে বসে। এই পর্ষদে ব্ল্যাকরকের প্রধান ল্যারি ফিঙ্ক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা এবং সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন। বৈঠকের পর ক্লাউস শোয়াব পদত্যাগ করেন।
তাঁর জায়গায় অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন নেসলের সাবেক প্রধান নির্বাহী পিটার ব্রাবেক-লেথমাথে। তবে, স্থায়ী চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে শোয়াব ও তাঁর পরিবার এটিকে ‘চরিত্র হনন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এই অভিযোগগুলোর কোনো ভিত্তি নেই এবং এর বিরুদ্ধে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেবেন।
ক্লাউস শোয়াব ১৯৭০-এর দশকে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে এই ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, কর্পোরেট প্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মিলিত হন।
এই ফোরাম বিশ্ব অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিভিন্ন নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের মতো একটি প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা এই ধরনের অভিযোগ নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। এর ফলে ফোরামের ভাবমূর্তিতে যেমন আঘাত লেগেছে, তেমনই বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান