ওজন কমানোর পুরনো কায়দা কি তবে ইতিহাসের পাতায়? ডায়েটিং সংস্থা ‘ওয়েটওয়াচার্স’-এর ভবিষ্যৎ এখন গভীর অনিশ্চয়তার মুখে, কারণ বাজারে এসেছে নতুন কিছু ওষুধ। এক সময়ের জনপ্রিয় এই সংস্থাটি সম্ভবত দেউলিয়া হওয়ার পথে, এমনটাই শোনা যাচ্ছে।
বাজারে আসা নতুন কিছু ওজন কমানোর ওষুধের সঙ্গে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।
ষাটের দশকে নিউইয়র্কের কিছু মানুষের সহায়তার জন্য শুরু হয়েছিল ‘ওয়েটওয়াচার্স’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি বিশাল বহুজাতিক সংস্থায় পরিণত হয়।
এই সংস্থাটি মানুষকে ওজন কমানোর স্বপ্ন দেখিয়ে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের পয়েন্ট-ভিত্তিক ডায়েট প্রোগ্রামটি ছিল খুবই জনপ্রিয়।
সেই সঙ্গে ছিল রান্নার বই, খাদ্যদ্রব্য, সাপ্তাহিক ওজন মাপা এবং আলোচনা সভার মতো ব্যবস্থা। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে ‘ডব্লিউ ডব্লিউ’ নামে পরিচিত হওয়া এই সংস্থাটি হয়তো তাদের ক্লায়েন্টদের বিদায় জানাতে চলেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুযায়ী, ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনা সফল না হলে, খুব শীঘ্রই দেউলিয়া হওয়ার আবেদন করতে পারে ‘ডব্লিউ ডব্লিউ ইন্টারন্যাশনাল’। এই মুহূর্তে ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ঋণে জর্জরিত সংস্থাটি।
ওজন কমানোর ইনজেকশন ‘ওজেম্পিক’-এর মতো ওষুধের কারণে ডায়েট শিল্পের ব্যবসায় যে পরিবর্তন এসেছে, তা বিশেষজ্ঞদের অজানা নয়।
লন্ডনের কিংস কলেজের জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক এবং ‘জো’ নামক বিজ্ঞান ও পুষ্টি সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা টিম স্পেক্টর মনে করেন, ‘ওয়েটওয়াচার্স’-এর দিন শেষ হতে চলেছে।
তিনি বলেন, একসময় যারা অতিরিক্ত ওজনের কারণে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হতেন, তাদের আশ্রয়স্থল ছিল এই সংস্থা। সারা বিশ্বে ২০২০ সালে তাদের প্রায় ৫০ লক্ষ গ্রাহক ছিল।
কিন্তু স্পেকটরের মতে, “ক্যালোরি গণনা করাটা একটা ভেলকিবাজির মতো। এটা অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে কাজ করে না, কারণ ক্যালোরি কমালে ক্ষুধা বাড়ে।”
ওজন কমানোর জন্য স্পেকটরের পরামর্শ হলো, “এমন খাবার খান যা আপনাকে তৃপ্ত করে। খাবারের গুণগত মান ও ফাইবারের দিকে নজর দিন। কম ক্যালোরি, কম ফ্যাট বা কম চিনিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে ভালো মানের খাবার খান।”
অন্যদিকে, ‘ওয়েটওয়াচার্স’ তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের খাবার তৈরি করেছে, যেখানে ক্যালোরির হিসাব এবং পরিবেশন করার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে অধ্যাপক স্পেকটর মনে করেন, ‘কম খান এবং বেশি ব্যায়াম করুন’—এই ধারণাটি ভুল। কারণ ‘ওজেম্পিক’, ‘ওয়েগোভি’ এবং ‘মাউঞ্জারো’-এর মতো জিএলপি-১ ওজন কমানোর ওষুধগুলো ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে অনেক বেশি কার্যকরী।
মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘এলি লিলি’ আগামী বছর যুক্তরাজ্যে দৈনিক ওজন কমানোর পিল নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে।
ট্রায়ালে দেখা গেছে, এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সহায়ক।
ডায়াবেটিস এবং ওজন কমানোর এই নতুন দিগন্তে ‘ওয়েটওয়াচার্স’-এর মতো সংস্থাগুলো কতটা টিকতে পারবে, তা এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান