শিরোনাম: প্রকৃতির সান্নিধ্যে মানসিক শান্তির অন্বেষণ: বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বন্যপ্রাণী কেন্দ্রিক ভ্রমণ
বর্তমান ব্যস্ততম জীবনযাত্রায় মানুষ যেন প্রকৃতির থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আধুনিক জীবনযাত্রার সুযোগ-সুবিধা আমাদের হাতের মুঠোয়, কিন্তু প্রকৃতির সান্নিধ্য থেকে আমরা ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছি।
মানসিক চাপ আর উদ্বেগের কারণে অনেকেই এখন প্রকৃতির মাঝে শান্তি খুঁজে ফিরছেন। বনস্নান বা ফরেস্ট বাথিংয়ের ধারণা বেশ পরিচিত, যেখানে প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানো হয়। তবে প্রকৃতির আরও গভীরে প্রবেশ করে বন্যপ্রাণীর সান্নিধ্যে সময় কাটানোর প্রবণতা বাড়ছে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বন্য পরিবেশে বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি আমাদের মনে এক ধরনের সম্মোহন তৈরি করে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরিবর্তন করে এবং প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে গভীর করে তোলে। বন্য পরিবেশে গেলে হৃদস্পন্দন ধীরে হয়, মানসিক চাপ কমে, মন শান্ত হয় এবং মনোযোগ বাড়ে।
বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে সুস্থ জীবনযাপনের ধারণা বাড়ছে। সেই ধারণাকে কেন্দ্র করে এখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বন্যপ্রাণী কেন্দ্রিক ভ্রমণ। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার এই প্রবণতা এখন একটি নতুন রূপ নিয়েছে।
আফ্রিকার বিভিন্ন রিজার্ভ থেকে শুরু করে পৃথিবীর নানা প্রান্তে, বন্যপ্রাণী কেন্দ্রিক ভ্রমণের চাহিদা বাড়ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ‘লন্ডোলোজি হিলিং হাউস রিট্রিট’ তেমনই একটি উদাহরণ। এখানে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন, সূর্যের আলো উপভোগ করা, শান্ত জলের শব্দ শোনা এবং বন্য প্রাণীদের দেখা—এসব কিছুই এই রিট্রিটের অংশ।
নামিবিয়ার কালাহারি মরুভূমিতে অবস্থিত ‘আওয়ার হ্যাবিটস নামিবিয়া’ প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর আরও একটি দারুণ জায়গা। এখানে যোগাভ্যাস, স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ এবং বন্যজীবন পরিদর্শনের সুযোগ রয়েছে।
কেনিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে ‘ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড ইয়োগা’ প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে। বতসোয়ানার জঙ্গলে হাতিদের বিশাল দল দেখতে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, যেখানে মননশীলতা এবং প্রকৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন দেখা যায়।
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়, যা মানুষকে ‘ব্লু মাইন্ড’-এ নিয়ে যায়।
ভ্রমণের এই নতুন ধারায়, গন্তব্যের চেয়ে অনুভূতির উপর বেশি জোর দেওয়া হয়। যেমন, আর্জেন্টিনার প্যাটাগোনিয়ায় ভাল্লুক দেখা, মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমিতে ঘোড়ায় চড়া, মাদাগাস্কারে রাতের বেলা বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও প্রাণীর জগৎ উপভোগ করা এবং নরওয়েতে আদিবাসী ‘সামী’দের সঙ্গে রেইনডিয়ার বা হরিণের অভিবাসন দেখা—এগুলো সবই এই ধরনের ভ্রমণের অংশ।
এই ধরনের ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া এবং মানসিক শান্তির অন্বেষণ করা। বিজ্ঞানীরাও বলছেন, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে আমাদের মস্তিষ্কের ইতিবাচক অংশে প্রভাব পড়ে, যা মানসিক চাপ কমায় এবং আমাদের মধ্যে ভালো থাকার অনুভূতি তৈরি করে।
মেক্সিকোর জুলুচুকায় কচ্ছপদের ডিম পাড়ার দৃশ্য দেখা যায়। এখানে পর্যটকদের জন্য কচ্ছপ সংরক্ষণে সহায়তার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও, যারা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে চান এবং একই সঙ্গে পরিবেশের জন্য কিছু করতে চান, তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং গবেষণায় সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।
প্রকৃতি এবং বন্যজীবন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া, বন্যপ্রাণীদের দেখা এবং তাদের সংরক্ষণে সহায়তা করা—এগুলো আমাদের মানসিক শান্তি এনে দিতে পারে এবং একই সঙ্গে প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে তোলে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক