ওয়েস অ্যান্ডারসন, যিনি তাঁর সিনেমাগুলোতে বিশেষ ধরনের পোশাক ব্যবহারের জন্য পরিচিত, এবার তাঁর নতুন ছবি ‘দ্য ফিনেশিয়ান স্কিম’-এ পোশাকের মাধ্যমে গল্প বলার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। সিনেমায় অভিনেতাদের পোশাক নির্বাচন নিয়ে তাঁর নিজস্ব ভাবনা এবং শৈলীর গভীরতা নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা করেছেন তিনি।
পোশাককে তিনি শুধু ফ্যাশন হিসেবে দেখেন না, বরং চরিত্র এবং গল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন।
ছোটবেলা থেকেই সিনেমার পোশাকে মুগ্ধ ছিলেন অ্যান্ডারসন। তাঁর ভাষায়, “ছোটবেলায় সিনেমায় ব্যবহৃত বিভিন্ন পোশাক আমাকে খুব আকৃষ্ট করত। আমি সেগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করতাম।” এই আগ্রহ থেকেই সিনেমার পোশাকের প্রতি তাঁর আলাদা মনোযোগ তৈরি হয়।
এমনকি ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া তাঁর প্রথম ছবি ‘বটল রকেট’-এর শুটিংয়ের সময় অভিনেতা ওয়েন উইলসনকে একটি শার্ট পরানোর জন্য রাজি করাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল তাঁকে।
পরবর্তীকালে, ১৯৯৮ সালের ‘রাশমোর’ ছবিতে জ্যাসন শোয়ার্জম্যানের চরিত্র ম্যাক্স ফিশারের পোশাকের জন্য টেক্সাসের একজন দর্জিকে বিশেষভাবে তৈরি পোশাক বানানোর দায়িত্ব দেন তিনি।
অ্যান্ডারসন জানান, “আমি চেয়েছিলাম, পোশাকটি যেন চরিত্রটির ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। তাই একেবারে শুরু থেকে সবকিছু নিখুঁতভাবে তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল।”
তাঁর সিনেমা ‘দ্য রয়্যাল টেনেনবামস’ (২০০১)-এর পোশাকের ডিজাইন আজও ফ্যাশন দুনিয়ায় আলোচনার বিষয়। এই ছবিতে বিল মারের পরা একটি জ্যাকেট পরে একবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছিলেন অ্যান্ডারসন।
পোশাকের প্রতি তাঁর এই ভালোবাসা এবং মনোযোগ আজও একইভাবে বিদ্যমান।
‘দ্য ফিনেশিয়ান স্কিম’-এও পোশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৫০-এর দশকের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবিতে প্রধান চরিত্র বেনিসিও দেল তোরো একজন ব্যবসায়ী।
তাঁর চরিত্রের পোশাকের জন্য ধূসর রঙের পিনস্ট্রাইপ স্যুট বেছে নেওয়া হয়েছে, যা ক্ষমতা এবং আভিজাত্যের প্রতীক। অ্যান্ডারসন মনে করেন, “এই ধরনের পোশাক একজন মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
বিশেষ করে, যখন কেউ জানে যে তাঁর জীবন সবসময় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
সিনেমাটিতে মিয়া থ্রেপলেটনের চরিত্রের জন্য সবুজ টাইটস ব্যবহার করা হয়েছে, যা একটি বিশেষ দৃশ্যে দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
মিলেনা ক্যাননেরো, যিনি অ্যান্ডারসনের অধিকাংশ ছবিতে পোশাকের ডিজাইন করেছেন, তাঁর সঙ্গে এই ছবিতেও কাজ করেছেন। অ্যান্ডারসনের মতে, ক্যাননেরো পোশাকের মাধ্যমে প্রতিটি চরিত্রের আলাদা বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে পারদর্শী।
পোশাকের মাধ্যমে গল্প বলার এই ধারণা অ্যান্ডারসনের সিনেমায় নতুন নয়। ‘গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল’-এর কর্মীদের পোশাক থেকে শুরু করে ‘ফ্যান্টাস্টিক মিস্টার ফক্স’-এর একটি দৃশ্যে পোশাকের ব্যবহার—প্রতিটি ক্ষেত্রেই পোশাক গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
অ্যান্ডারসনের মতে, “সিনেমা হলো একটি দৃশ্যমান মাধ্যম। এখানে সংলাপের পাশাপাশি, পোশাকের মাধ্যমেও অনেক কিছু প্রকাশ করা যায়।” তাঁর সিনেমায় পোশাক, চরিত্র এবং গল্পের একটি সমন্বিত রূপ দেখা যায়, যা দর্শকদের জন্য এক আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন