দেয়ালে প্রতিবাদ, সমাজে পরিবর্তন! আফ্রিকার রাস্তায় বাড়ছে গ্রাফিতি

পশ্চিম আফ্রিকায় গ্রাফিতি: দেয়ালের ক্যানভাসে প্রতিচ্ছবি।

আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে সেনেগাল এবং গিনিতে, গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র এখন আর নিছক ভাঙচুর বা অরাজকতার প্রতিচ্ছবি নয়। সময়ের সাথে সাথে এটি একটি শক্তিশালী শিল্প মাধ্যমে পরিণত হয়েছে, যা সমাজের কথা বলে, সংস্কৃতিকে তুলে ধরে এবং রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেয়।

এক সময়ের উপেক্ষিত এই শিল্প বর্তমানে জনসাধারণের মধ্যে ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

সেনেগালে ১৯৮৮ সালে প্রথম গ্রাফিতির আবির্ভাব হয়। শিল্পী আমাদু লামিন এনগোম, যিনি ‘ডোক্টা’ নামে পরিচিত, তিনিই এই শিল্পের পথপ্রদর্শক।

তিনি এবং তার সহশিল্পীরা মিলে রাজধানী শহর ডাকার-এর দেয়ালগুলোতে ছবি আঁকা শুরু করেন, যা ধীরে ধীরে আফ্রিকার নিজস্ব সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলে। শুরুতে তারা রাতের আঁধারে কাজ করতেন, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দিনের আলোয় ছবি আঁকা শুরু করেন, যা তাদের কাজের প্রতি সমাজের শ্রদ্ধাবোধ বাড়িয়ে তোলে।

ডোক্টা মনে করেন, এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে তারা আফ্রিকার সংস্কৃতি ও বাস্তবতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন, যা পশ্চিমা বিশ্বের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

গিনিতে, ২০১৮ সালে শিল্পী ওমর দিয়ো, যিনি ‘চিমেরে’ নামে পরিচিত, গ্রাফিতির ধারণা নিয়ে আসেন। শুরুতে, এখানে গ্রাফিতি ছিল প্রায় অচেনা।

চিমেরে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে গ্রাফিতি ব্যবহার করা শুরু করেন। কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বার্তা থেকে শুরু করে, স্থানীয় সঙ্গীতশিল্পী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিশাল ছবি এঁকে তিনি রাজধানী কোনাক্রির জনজীবনকে নতুন রূপ দিয়েছেন।

তার আঁকা ছবিগুলো শহরের কংক্রিটের দেওয়ালের ক্যানভাসে আফ্রিকার ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলে। দিয়োর ‘গিনি ঘেটো গ্রাফ’ নামক একটি দল রয়েছে, যারা এই ধরনের শিল্পকর্মের সাথে জড়িত।

কোনাক্রির দ্রুত নগরায়নের প্রেক্ষাপটে, চিমেরের কাজ শহরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা এখন তাদের শহরের দেয়ালে আঁকা ছবিগুলো উপভোগ করে এবং তাদের প্রশংসা করে। এমনকি ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতা গ্রহণকারী জেনারেল মামাদি ডম্বয়ার ছবিও তিনি এঁকেছেন, যা জনসাধারণের মধ্যে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।

স্থানীয় এক তরুণ, ওউসমান সিল্লা, যিনি চিমেরের কাজের সাথে পরিচিত, তিনি বলেন, “এই ছবিগুলো আমাদের পুরনো দিনের গিনির সঙ্গীতশিল্পীদের কথা মনে করিয়ে দেয়। গ্রাফিতি আমাদের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়।”

বর্তমানে, সেনেগালে গ্রাফিতি রাজনৈতিক প্রতিবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। গিনিতেও, অভিবাসন সহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে শিল্পীরা কাজ করছেন।

জানা যায়, কোনাক্রির গভর্নরও চিমেরের কাজকে সমর্থন করেন এবং তাকে যেখানে খুশি ছবি আঁকার অনুমতি দিয়েছেন।

আফ্রিকার এই অঞ্চলের গ্রাফিতির বিস্তার প্রমাণ করে যে, শিল্প কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ারও।

দেয়ালের ক্যানভাসে আঁকা ছবিগুলো এখন তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি। ভবিষ্যতে এই শিল্পে আরও বেশি নারীর অংশগ্রহণ আশা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *