রমজান মাস, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পবিত্র মাস, সারা বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়। এই মাসে, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাসের মাধ্যমে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা হয়।
এই সময়টাতে শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানই নয়, বরং বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই মাসের উদযাপন ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয়। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য, সেখানেও রমজান পালনের নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে।
পশ্চিম আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূল থেকে সাহেলীয় অঞ্চল পর্যন্ত রমজান মাসটি এক বিশেষ আবহে উদ্যাপিত হয়। এখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন ইফতারের জন্য একত্রিত হন, যা দিনের উপবাস ভাঙার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
এই সময়টাতে খাবার ভাগ করে নেওয়া, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলিত হওয়া, এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করা এখানকার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সেনেগালে, ইফতারের সময় স্থানীয় সার্ডিনেলা মাছের মশলাযুক্ত পেস্ট দিয়ে তৈরি করা স্যান্ডউইচ বিতরণ করা হয়। ঘানায়, মহিলারা ভুট্টা এবং কাসাভা দিয়ে ‘টুও জাফি’ নামক একটি বিশেষ খাবার তৈরি করেন, যা সাধারণত টমেটো, মশলা এবং আয়ো দিয়ে তৈরি একটি স্ট্যুর সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
মালি, বুর্কিনা ফাসো ও নাইজারের মতো সাহেলীয় দেশগুলোতে পরিবারগুলো তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রস্তুত করে, যার মধ্যে মাংস ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি সুস্বাদু বাদাম স্ট্যু অন্যতম।
রমজান মাসে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেক সময় খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যায়। তবে, এই পবিত্র মাসে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সক্রিয় হয়।
সেনেগালের রাজধানী ডাকার এবং ঘানার রাজধানী আক্রার মতো শহরগুলোতে এই ধরনের সংস্থাগুলো ইফতারের আয়োজন করে এবং খাদ্য বিতরণ করে থাকে। এটি শুধু একটি মাসের উদযাপন নয়, বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহানুভূতি, দানশীলতা এবং ভালোবাসার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে রমজান মাসের এই উদযাপন, আমাদের দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের রমজান পালনের মতোই তাৎপর্যপূর্ণ। উভয় স্থানেই, এই মাসটি আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, ইবাদত এবং সম্প্রদায়ের বন্ধন দৃঢ় করার একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
রমজানের এই পবিত্র মাসে, সবার জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আসুক, এই কামনা করি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস