তিমিদের গোপন কথা ফাঁস! আদালতে লড়বে?

তিমিদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলার দিন কি আসছে? বিজ্ঞানীরা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে তিমিদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছেন, যা ভবিষ্যতে তাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে সাহায্য করতে পারে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রতিবেদনে এই সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

ডমিনিকা দ্বীপের কাছে সমুদ্রের গভীরে বসবাসকারী স্পার্ম হোয়েল বা শুক্রাণু তিমিদের নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের প্রধান লক্ষ্য হল, তিমিদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের পদ্ধতিগুলো শনাক্ত করা। ‘প্রজেক্ট সিটি’ নামের একটি প্রকল্পের অধীনে, বিজ্ঞানীরা তিমিদের কণ্ঠস্বর রেকর্ড ও বিশ্লেষণ করার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।

এই প্রকল্পের প্রধান ডেভিড গ্রুবার। তাঁর মতে, তিমিদের ভাষা বুঝতে পারলে তাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, তিমিরা কিভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তা জানার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে নতুন ধারণা তৈরি হবে। শব্দদূষণ তাদের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে, তা হয়তো তাদের ভাষাতেই জানা যাবে।

সমুদ্রের শব্দদূষণ, বিশেষ করে জাহাজ ও অন্যান্য নৌযানের কারণে সৃষ্ট শব্দ, তিমিদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলে। শব্দদূষণের কারণে তারা শিকার খুঁজে পেতে এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে সমস্যা অনুভব করে। এই সমস্যাগুলো তাদের ভাষায় রেকর্ড করা গেলে, ভবিষ্যতে আইনি লড়াইয়েও তা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন ম্যামাল প্রোটেকশন অ্যাক্ট এবং এনডেঞ্জার্ড স্পিসিজ অ্যাক্ট-এর মতো আইনগুলো তিমিদের রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু শব্দদূষণ সংক্রান্ত ক্ষতি কমাতে এই আইনগুলো তেমন কার্যকর হয়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তিমিদের নিজস্ব ভাষায় তাদের কষ্টের কথা জানা গেলে, সম্ভবত বিদ্যমান আইনগুলোকে আরও শক্তিশালী করা যাবে।

এমনকি, তিমিদের অধিকার রক্ষার জন্য নতুন আইন তৈরির সম্ভাবনাও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিমিদের ভাষা আবিষ্কারের ফলে তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। বিভিন্ন তিমির দল বা গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ভাষায় ও সংস্কৃতিতে একে অপরের সঙ্গে মিশে থাকে।

মানুষের মতো, তাদেরও নিজস্ব সামাজিক রীতিনীতি রয়েছে। গবেষকরা যদি তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে তাদের ভাষায় জানতে পারেন, তবে তাদের জীবন আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হবে।

তবে, এই গবেষণা নিয়ে কিছু উদ্বেগও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তিমিদের ভাষা ব্যবহারের প্রযুক্তি তৈরি হওয়ার ফলে, তা ক্ষতির কারণও হতে পারে। এমন সম্ভাবনাও রয়েছে, যখন মানুষ তিমিদের ভাষা ব্যবহার করে তাদের ক্ষতি করতে চাইবে।

বিজ্ঞানীরা তাই এই বিষয়ে সতর্ক হতে বলছেন এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন।

বর্তমানে, পানামা ও ইকুয়েডরের মতো কিছু দেশে প্রাণীদের কিছু অধিকার দেওয়া হয়েছে। ইকুয়েডরের সর্বোচ্চ আদালত ঘোষণা করেছে যে, সকল প্রাণীই আইনগতভাবে ব্যক্তি।

ভবিষ্যতে, তিমিদের ভাষা আবিষ্কার এবং তাদের অধিকারের বিষয়টি পরিবেশ সুরক্ষার ধারণা আরও প্রসারিত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *