বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইন প্রতারণা একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এর শিকার হচ্ছেন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ।
সম্প্রতি, জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) প্রায় ৬৮ লক্ষ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে, যেগুলি বিভিন্ন অপরাধ চক্রের সাথে জড়িত ছিল এবং অনলাইন জালিয়াতির মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। মেটা (Meta), হোয়াটসঅ্যাপের মূল কোম্পানি, এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এই বিপুল সংখ্যক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে।
ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রতারণা রোধ করতে হোয়াটসঅ্যাপ বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ব্যবহারকারীর পরিচিত নন এমন কেউ যদি তাকে কোনো গ্রুপে যুক্ত করে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে একটি সতর্কবার্তা প্রদর্শিত হবে।
এছাড়াও, সন্দেহজনক কোনো বার্তা পেলে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার জন্য প্ল্যাটফর্মটিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে প্রতারকরা তাদের কৌশল অনেক বেশি সূক্ষ্ম করে তুলেছে।
তারা বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাব, যেমন – ‘অতিরিক্ত উপার্জনের সুযোগ’, ‘বিনিয়োগের লোভনীয় প্রস্তাব’ ইত্যাদি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং অর্থ হাতিয়ে নেয়।
এই ধরনের প্রতারণা প্রায়শই টেক্সট মেসেজ, ডেটিং অ্যাপস, সামাজিক মাধ্যম এবং পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
অনেক সময়, অপরাধীরা ভুক্তভোগীদের ফাঁদে ফেলতে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে থাকে।
এমনকি, তারা চ্যাটজিপিটির (ChatGPT) মতো এআই-চালিত সরঞ্জাম ব্যবহার করে জাল বার্তা তৈরি করে, যা ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করে।
মেটা কর্তৃপক্ষের মতে, এই ধরনের প্রতারণার মূল কেন্দ্রগুলো সাধারণত বিভিন্ন দেশে সক্রিয় থাকে এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
সম্প্রতি, কম্বোডিয়ার একটি প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যারা এই ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
মেটা, ওপেনএআই-এর (OpenAI) সাথে সহযোগিতা করে এই চক্রটির কার্যক্রম বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই খবরটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশেও অনলাইন প্রতারণার প্রবণতা বাড়ছে।
অনেকেই বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় প্রস্তাবের শিকার হচ্ছেন এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
ব্যবহারকারীদের সচেতনতা এবং সতর্কতাই এক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার হতে পারে।
অপরিচিত কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে আসা সন্দেহজনক বার্তা বা অফার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এছাড়াও, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন – ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ওটিপি (OTP) বা পিন নম্বর, কারো সাথে শেয়ার করা উচিত না।
সুতরাং, হোয়াটসঅ্যাপ সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করার সময় আমাদের সকলকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
কোনো ধরনের সন্দেহজনক কার্যকলাপ নজরে এলে, তা কর্তৃপক্ষের নজরে আনা উচিত।
আপনার সামান্য সচেতনতা আপনাকে এবং আপনার পরিচিতজনদের অনলাইন প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস