যুক্তরাষ্ট্র সরকার শিশুদের স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে সংশোধন আনতে যাচ্ছে। জানা গেছে, এই প্রতিবেদনে এমন কিছু গবেষণার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তথ্যসূত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ‘ফরম্যাটিং সমস্যা’ হয়েছে এবং দ্রুতই তা সংশোধন করা হবে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংশোধনীর পরেও দেশটির স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সহজে মিটবে না।
গত সপ্তাহে ‘মেক আমেরিকা হেলদি এগেইন’ (MAHA) কমিশন শিশুদের স্বাস্থ্য বিষয়ক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
ডিজিটাল নিউজ পোর্টাল নটাস (NOTUS) সর্বপ্রথম এই প্রতিবেদনে থাকা ভুলগুলো চিহ্নিত করে।
তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রিপোর্টে উল্লেখিত সাতটি গবেষণার কোনো অস্তিত্ব নেই। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে দেওয়া লিংক কাজ করছে না এবং অনেক তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ক্যারোলিন লেভিট জোর দিয়ে বলেন, এইসব সমস্যা সত্ত্বেও প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত রয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই রিপোর্টটি সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত স্বাস্থ্য বিষয়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শিশুদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার পেছনে প্রক্রিয়াজাত খাবার, রাসায়নিক দ্রব্য, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং ওষুধ ও ভ্যাকসিনের অতিরিক্ত ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো দায়ী।
এতে ৫০০-র বেশি গবেষণার উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু, এই গবেষণাপত্রগুলোর লেখক হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ জানিয়েছেন, তারা এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
এমনকি, তাদের এমন কোনো গবেষণা নেই।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নোয়া ক্রেস্কি, যিনি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কিশোর-কিশোরীদের উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধের লেখক হিসেবে তালিকায় ছিলেন, তিনি এ বিষয়ে জানান, এই গবেষণাপত্রটি তাদের নয় এবং এমন কোনো গবেষণা হয়েছে বলেও তিনি জানেন না।
প্রতিবেদনে ‘জামَا পেডিয়াট্রিক্স মেডিকেল রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের লিংক দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু সেই লিংকটি কাজ করছিল না।
জামা নেটওয়ার্কের একজন মুখপাত্র জানান, তাদের জার্নালে এমন কোনো নিবন্ধ প্রকাশিত হয়নি।
ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করে।
তারা কেনেডির সংস্থার বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন’ তথ্য ও সূত্রের ওপর ভিত্তি করে তাদের নীতি নির্ধারণের অভিযোগ আনে।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে কেনেডির মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
অতীতে তিনি ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে তার ভূমিকা নিয়ে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসা মহলে উদ্বেগ রয়েছে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ফেডারেল স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে কয়েক হাজার কর্মীকে বরখাস্ত করেছেন এবং জৈব চিকিৎসা গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত কয়েক বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ কমিয়ে দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ‘MAHA প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু একই রয়েছে।
এটি শিশুদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা নিয়ে সরকারের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন।’
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা