মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, হোয়াইট হাউসের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ চ্যাটে, যেখানে সংবেদনশীল সামরিক পরিকল্পনার তথ্য আদান-প্রদান করা হতো, সেই চ্যাট গ্রুপের সদস্য হিসেবে ভুল করে একজন সাংবাদিককে যুক্ত করা হয়েছিল।
এর ফলস্বরূপ, ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য বিমান হামলার গোপন পরিকল্পনা ওই সাংবাদিকের হাতে চলে যায়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ঘটনাটি ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং এর জেরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের রাজনীতিবিদরাই এই ঘটনাকে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, গোপনীয় সামরিক তথ্যের এমন বেপরোয়া ব্যবহারের ফলে দেশের নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
সিনেটর ক্রিস কুনস এক টুইট বার্তায় বলেছেন, “এই ঘটনার সাথে জড়িত হোয়াইট হাউসের সকল কর্মকর্তা একটি গুরুতর অপরাধ করেছেন।”
অন্যদিকে, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য প্যাট্রিক রায়ান এই ঘটনাকে ‘ভয়ঙ্কর’ হিসেবে অভিহিত করে এর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এমনকি, রিপাবলিকান সিনেটর জন করনিনও এই ঘটনাকে ‘মারাত্মক ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আলোচিত এই গোপন চ্যাট গ্রুপটিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যেমন – মার্কো রুবিও, মাইক ওয়াল্টজ এবং পিটার হেগসেথ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন।
সংবাদে প্রকাশ, ওই চ্যাটে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য বিমান হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছিল এবং অত্যন্ত গোপনীয় এই তথ্যগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাওয়ার কথা ছিল।
তবে, একজন সাংবাদিকের ভুলক্রমে সেই চ্যাটে যুক্ত হওয়ার কারণে এই তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে।
তবে, তারা এটিকে ‘অসাবধানতাবশত’ ঘটা একটি ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে এর গুরুত্ব কমাতে চাইছে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীর ও সুচিন্তিত নীতি সমন্বয়ের একটি উদাহরণ হিসেবেই আমরা এই বার্তা আদান-প্রদানকে দেখি।”
তবে, বিরোধী দল এবং অনেক বিশেষজ্ঞ এই যুক্তির সঙ্গে একমত নন।
তাদের মতে, গোপনীয় তথ্য আদান-প্রদানের জন্য এই ধরনের অনিরাপদ মাধ্যম ব্যবহার করা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এমনকি, এই ঘটনা ফেডারেল রেকর্ড সংরক্ষণের আইনও লঙ্ঘন করতে পারে।
কারণ, এই চ্যাটের বার্তাগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাওয়ার কথা ছিল, যা সরকারি যোগাযোগের রেকর্ড সংরক্ষণে বাধা সৃষ্টি করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং সরকারের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।
এই ঘটনার জেরে ভবিষ্যতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian