মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা একটি আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ভেনেজুয়েলার নাগরিক এবং গ্যাং সদস্য সন্দেহে কয়েকজনকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠিয়েছে।
এই ঘটনার জেরে মার্কিন বিচার বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, যা দেশটির সাংবিধানিক কাঠামোকে আরও এক ধাপ সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে মূলত ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ নামক একটি পুরনো আইনের ব্যবহারের কারণে। এই আইনটি সাধারণত যুদ্ধের সময় বিদেশি নাগরিকদের বিতাড়িত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই বিতর্কিত আইন ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ফেরত পাঠিয়েছে, যা নিয়ে অনেক আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে।
আদালত এক আদেশে এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। আদালতের বক্তব্য ছিল, বিতাড়ন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে এই আইনের প্রয়োগের যথার্থতা খতিয়ে দেখা দরকার।
এমনকি, যে বিমানগুলোতে করে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছিল, সেগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করেনি।
তাদের মতে, বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিরা ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ নামক একটি গ্যাংয়ের সদস্য এবং তাদের আগেই মার্কিন ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে জানান, আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার কোনো ‘বৈধ ভিত্তি’ ছিল না।
লেভিট আরও যোগ করেন, “একজন বিচারক একটি বিদেশি সন্ত্রাসী বোঝাই বিমানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, যাদের ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে, এল সালভাদরে বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এমন কোনো স্থানে কাউকে ফেরত পাঠানো যায় না, যেখানে তাদের ওপর নির্যাতনের সম্ভাবনা থাকে।
এল সালভাদরের কারাগারের পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ এবং সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতিও প্রশ্নবিদ্ধ। এমতাবস্থায়, গ্যাং সদস্য সন্দেহে বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের সেখানে ফেরত পাঠানো কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়েও বিতর্ক চলছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কেন ট্রাম্প প্রশাসন গ্যাং সদস্যদের বিতাড়নের জন্য এই বিতর্কিত ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ ব্যবহার করছে?
অনেকে মনে করছেন, এর মাধ্যমে অভিবাসন নীতিকে আরও কঠোর করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনের এক গ্রিন কার্ডধারীকে আটকের ঘটনাও নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এই ঘটনার জেরে তাঁর গ্রিন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তাঁর সমর্থকদের অভিযোগ, ওই ব্যক্তিকে তাঁর মত প্রকাশের অধিকারের জন্য নিশানা করা হচ্ছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিনিদের মধ্যে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, সরকারের নীতিমালার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে কোনো অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
এই মামলাগুলো বিচারে গেলে, তা হয়তো সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা এবং ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কেমন হবে, সে বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হবে।
সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্প ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন এবং এমন কিছু পরিবর্তন আনতে চাইছেন, যা ভবিষ্যতে পরিবর্তন করা কঠিন হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন