আতঙ্কিত শ্বেতাঙ্গ: ট্রাম্পের শরণার্থী প্রস্তাবে সাড়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়লেন ৪৯ জন!

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শরণার্থী স্ট্যাটাসের ভিত্তিতে ৪৯ শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিকের দেশত্যাগ।

দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু আফ্রিকান সম্প্রদায়ের ৪৯ জন সদস্য সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তাদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই এই ঘটনা ঘটে। গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন এই সংক্রান্ত একটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে, যার অধীনে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

জানা গেছে, পরিবার ও শিশুদের একটি দল নিয়ে তারা জোহানেসবার্গের ওআর টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি বিশেষ বিমানে রওনা দেয়। এই দলটি সোমবার সকালে ওয়াশিংটনের কাছে অবস্থিত ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কলেন মসিবি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের প্রতি জাতিগত বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনেছিল। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে গত ৭ই ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাহী আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। তবে, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। তাদের মতে, আফ্রিকানদের উপর কোনো প্রকার নিপীড়ন চালানো হচ্ছে না।

এই শরণার্থীদের দ্রুত ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে, যেখানে অন্যান্য শরণার্থী প্রোগ্রামের আবেদন স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তান, ইরাক এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে আদালতের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে, কেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শরণার্থীদের পেছনে ফেলে শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী মর্যাদা পেতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগে।

ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করে আসছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার শ্বেতাঙ্গ-বিরোধী নীতি গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ‘ইতিবাচক কর্মসংস্থান’ বিষয়ক আইন এবং একটি নতুন ভূমি অধিগ্রহণ আইন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের মতে, এই আইনগুলো আফ্রিকানদের জমির ওপর আঘাত হানছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এই অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জানিয়েছে, তাদের দেশে আফ্রিকানদের প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় না। এমনকি, এখন পর্যন্ত কোনো জমি অধিগ্রহণও করা হয়নি।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার আরও দাবি করেছে, কিছু গ্রামীণ সমাজে আফ্রিকানদের ওপর জাতিগত হামলার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাদের মতে, ডাচ এবং ফরাসি ঔপনিবেশিকদের বংশধর আফ্রিকানরা দেশটির ‘অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সুবিধাভোগী’ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।

জানা গেছে প্রথম দলটির যাত্রা তিউলসা, ওকলাহোমা ভিত্তিক চার্টার কোম্পানি ওমনি এয়ার ইন্টারন্যাশনাল পরিচালনা করেছে। তারা সেনেগালের ডাকার-এ জ্বালানি ভরার জন্য যাত্রা বিরতি করে ডালাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

হোয়াইট হাউসের চিফ অফ স্টাফ স্টিফেন মিলার শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, আফ্রিকানদের প্রতি যা ঘটছে, তা শরণার্থী প্রোগ্রাম তৈরির মূল কারণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, “এটি একটি সুরক্ষিত বৈশিষ্ট্যের (জাতি) উপর ভিত্তি করে হওয়া নিপীড়ন, এবং এটি জাতিগত নিপীড়ন।”

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের শরণার্থী পুনর্বাসন কার্যালয় তাদের আবাসন, আসবাবপত্র, খাদ্য, পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। বিভাগের একটি নথি থেকে জানা যায়, আফ্রিকানদের পুনর্বাসন ছিল প্রশাসনের একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার’।

দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় ২৭ লক্ষ আফ্রিকান সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে, যাদের অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ।

দক্ষিণ আফ্রিকার অনেকেই মনে করেন, আফ্রিকানরা শরণার্থী হিসেবে পুনর্বাসনের যোগ্য নয়। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ব্যবসা থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদেও তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। তাদের ভাষা সরকারিভাবে স্বীকৃত এবং বিভিন্ন শহরে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিদ্যমান।

ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমালোচনা করেছে। ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ-বিরোধী অবস্থানের কারণে দেশটির প্রতি সমস্ত মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক এবং গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনাকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘আগ্রাসী মনোভাব’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *