দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের উপর ‘গণহত্যা’র মিথ্যা অভিযোগ, যা যুক্তরাষ্ট্রেও বিভাজন সৃষ্টি করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলে একটি মিথ্যা ধারণা তৈরি করা হচ্ছে, যা দেশটির অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই অভিযোগের মূল ভিত্তি হলো, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে চাইছে।
এই অভিযোগের সঙ্গে প্রায়ই উঠে আসছে ‘গণহত্যা’র মতো শব্দ। কিন্তু তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাষ্যকার টাকার কার্লসন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার একটি ডানপন্থী সংগঠন, যাদের মূল লক্ষ্য আফ্রিকানদের স্বার্থরক্ষা করা, তাদের মধ্যে হওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। এই সাক্ষাৎকারে শ্বেতাঙ্গদের ওপর অত্যাচারের মিথ্যা কাহিনী পরিবেশন করা হয়।
তাদের অভিযোগ, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে এবং তাদের হত্যা করা হচ্ছে। তবে, দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের হত্যার ঘটনা মোট হত্যার মাত্র ১ শতাংশ। এমনকি একটি আদালতও এই ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে রায় দিয়েছে।
আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য বিলোপের পর, দক্ষিণ আফ্রিকা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশটিতে একটি প্রগতিশীল সংবিধান রয়েছে এবং শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থা বিদ্যমান।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও মানবাধিকারের পক্ষে দেশটি সোচ্চার। তবে, এখনো এখানে জাতিগত বৈষম্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুযোগের অভাব রয়েছে। সরকার এই সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছে এবং এর অংশ হিসেবে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে, এই মিথ্যা অভিযোগের প্রচারের ফলে যুক্তরাষ্ট্রেও বিভাজন তৈরি হচ্ছে। শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভীতি তৈরি করে তাদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।
এমনকি, শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করতে গিয়ে সেখানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচিও বাতিল করার চেষ্টা চলছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পদের ব্যবধান দক্ষিণ আফ্রিকার মতোই। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেখানে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৫ শতাংশ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৬ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে যুক্তরাষ্ট্র এখনো অনেক পিছিয়ে আছে।
এই পরিস্থিতিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু সংগঠন এবং তাদের সমর্থকরা সরকারের নেওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপগুলোকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা টিকিয়ে রাখা এবং কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অধিকার খর্ব করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা প্রচারের মাধ্যমে সমাজে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। এই ধরনের অপপ্রচার রুখে দিতে এবং সকলের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়তে, সত্যনিষ্ঠ তথ্য প্রচারের কোনো বিকল্প নেই।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা