নতুন পোপ নির্বাচিত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পোপ লিও চতুর্দশ
ভ্যাটিকান সিটি থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, ক্যাথলিক চার্চের নতুন প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শিকাগোর কার্ডিনাল রবার্ট প্রিভোস্ট। তিনি পোপ ফ্রান্সিসের স্থলাভিষিক্ত হবেন। নতুন পোপ ‘লিও চতুর্দশ’ নাম গ্রহণ করেছেন। এই প্রথম কোনো মার্কিন নাগরিক ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন।
পোপ লিও চতুর্দশ ১৯৫৫ সালে শিকাগোতে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং মা লাইব্রেরি বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই চার্চের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল।
১৯৭৭ সালে তিনি পেনসিলভানিয়ার ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি শিকাগোর ক্যাথলিক থিওলজিক্যাল ইউনিয়ন থেকে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৮২ সালে রোমের পন্টিফিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট থমাস অ্যাকুইনাস থেকে চার্চের আইন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি পেরুর একটি মিশনে কাজ করতে যান।
পরবর্তীকালে, তিনি শিকাগো ও পেরুর মধ্যে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাঁকে পেরুর চিকলাওয়ের বিশপ হিসেবে নিয়োগ দেন। একই বছর তিনি পেরুর নাগরিকত্বও লাভ করেন। ২০২৩ সালে তিনি রোমে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সংস্থা, বিশপ বিষয়ক দপ্তর (Dicastery for Bishops)-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান।
নতুন পোপ হিসেবে তাঁর প্রথম ভাষণে, লিও নিজেকে একজন অগাস্টিনিয়ান হিসেবে পরিচয় দেন। অগাস্টিনিয়ান হলো ক্যাথলিক চার্চের একটি ধারা, যা সেন্ট অগাস্টিন অফ হিপ্পোর শিক্ষা অনুসরণ করে। এই ধারায় প্রেম, সম্প্রীতি, নম্রতা এবং চার্চের আধ্যাত্মিক সম্প্রদায়ের প্রতি উৎসর্গীকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়। অগাস্টিনিয়ান শব্দটি এমন ব্যক্তিদেরও বোঝায় যারা এই ধারার সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। পোপ লিও ১৪-সহ মোট ২৬৬ জন পোপের মধ্যে ৩৪ জন এই ধারার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন প্রথম জেসুইট সম্প্রদায়ের পোপ। এর আগে দেড় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের থেকে কেউ পোপ হননি। নতুন পোপ ফ্রান্সিসের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসকে একটি প্রগতিশীল ধারার অনুসারী হিসেবে দেখা হতো, যিনি দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের পক্ষে ছিলেন।
পোপ নির্বাচনের পর দেওয়া প্রথম ভাষণে, পোপ লিও বলেন, “আসুন, আমরা পোপ ফ্রান্সিসের দুর্বল কিন্তু সাহসী কণ্ঠস্বরকে সবসময় আমাদের কানে রাখি।” অভিবাসন বিষয়ক নীতি নিয়ে পোপ লিও’র বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। তিনি অতীতে অভিবাসন বিরোধী নীতির সমালোচনা করেছেন।
এছাড়াও, নারীদের যাজক হওয়ার বিষয়ে তাঁর একটি রক্ষণশীল মনোভাব রয়েছে বলে জানা যায়।
পোপ লিও’র অগাস্টিনিয়ান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা না করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি এই বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন।
পোপ লিও’র বয়স ৬৯ বছর। তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম বয়সে পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। খেলাধুলার প্রতি তাঁর আগ্রহ রয়েছে।
বিশেষ করে, তিনি টেনিস খেলতে ভালোবাসেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা