whole grain -এর আসল রহস্য! স্বাস্থ্যকর নাকি শুধুই ধারণা?

আস্ত শস্য নাকি পরিশোধিত শস্য: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নতুন ভাবনা।

আমরা যারা খাদ্য এবং স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন, তাদের প্রায়ই একটা প্রশ্ন মনে আসে – আস্ত শস্য কি সত্যিই পরিশোধিত শস্যের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর? বিশেষ করে যখন আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত, রুটি ইত্যাদি নিয়ে কথা হয়, তখন এই প্রশ্ন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমাদের দেশের খাদ্যভ্যাসে শস্য জাতীয় খাবারের গুরুত্ব অনেক। তাই, কোন ধরনের শস্য আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, সেই বিষয়ে সঠিক ধারণা রাখা জরুরি।

আসল কথা হলো, শস্য মূলত একটি বীজ, যা ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের থেকে আসে। এই শস্যের বাইরের শক্ত স্তরটি হলো ‘ব্রান’, ভেতরের ছোট অংশটি ‘জার্ম’ এবং শস্যের মাঝের বড় অংশটি ‘এন্ডোস্পার্ম’। যখন শস্যকে পরিশোধিত করা হয়, যেমন সাদা চাল বা ময়দা তৈরির সময়, তখন ব্রান এবং জার্ম সরিয়ে ফেলা হয়, শুধুমাত্র এন্ডোস্পার্ম অবশিষ্ট থাকে। পরিশোধনের ফলে শস্যের পুষ্টিগুণ কমে যায়, কারণ ব্রান ও জার্মে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে।

তাহলে, আস্ত শস্যের উপকারিতা কি? আস্ত শস্যে পরিশোধিত শস্যের চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টি উপাদান থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাদ্যআঁশ বা ফাইবার। ফাইবার আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়ায়, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া, এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আস্ত শস্য গ্রহণ হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়।

অন্যদিকে, পরিশোধিত শস্যের অতিরিক্ত গ্রহণের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। পরিশোধিত শস্যে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে, ফলে হজম সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে। এছাড়া, অনেক সময় পরিশোধিত শস্য দিয়ে তৈরি খাবারে অতিরিক্ত চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম যোগ করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

আমাদের দেশে সাদা চাল একটি অতি পরিচিত খাবার। তবে, সাদা চালের পরিবর্তে যদি আমরা লাল চাল বা ব্রাউন রাইস খাওয়ার অভ্যাস করি, তাহলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী হবে। একইভাবে, সাদা আটার রুটির বদলে মাল্টিগ্রেইন আটা বা আস্ত গমের আটা ব্যবহার করা যেতে পারে।

কিন্তু তার মানে কি এই যে, পরিশোধিত শস্য একেবারেই খাওয়া যাবে না? না, এমনটা নয়। পরিশোধিত শস্য আমাদের খাদ্যভ্যাসের একটি অংশ হতে পারে, তবে তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। জাপানের মানুষজন তাদের খাবারে সাদা চাল ব্যবহার করে এবং তারা সাধারণত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে। গুরুত্বপূর্ণ হলো, খাবারের পরিমাণ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে আস্ত শস্য বেশি পরিমাণে এবং পরিশোধিত শস্য কম পরিমাণে রাখা উচিত। এছাড়াও, প্রচুর ফল ও সবজি খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন।

খাবার কেনার সময় প্যাকেজের উপাদান ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত। “হোল হুইট” বা “১০০% হোল গ্রেইন” লেখা আছে কিনা, তা দেখে নিশ্চিত হতে পারেন। এছাড়াও, যে খাবারে প্রতি সার্ভিংয়ে অন্তত ৩ গ্রাম ফাইবার আছে, সেটি স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

আস্ত শস্য আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, তবে স্বাস্থ্য শুধু খাদ্যের উপর নির্ভরশীল নয়। পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম এবং মানসিক স্বাস্থ্যও সুস্থ জীবনের জন্য জরুরি। তাই, খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *